নোয়াখালীতে শীতের সঙ্গে পুরোনো কাপড়ের দোকানে বাড়ছে ভিড়

নোয়াখালীতে কয়েক দিন ধরে কুয়াশার সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ফলে গরম কাপড় বিক্রির হিড়িক পড়েছে। বিত্তবানরা অভিজাত শপিং মল ও বিপণিবিতানে ছুটলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের অনেকেই ফুটপাতের দোকানগুলোর দ্বারস্থ হচ্ছেন। শিশু ও বৃদ্ধদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশি।
বিজ্ঞাপন
জেলা শহরের মাইজদী, বিজয় মেলা প্রাঙ্গণ ও সোনাপুর বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাত ও মার্কেটগুলোতে সোয়েটার, উলের পোশাক, ব্লেজার, ট্রাউজার, জ্যাকেট, চাদর, মাফলার, কানটুপিসহ নানা ধরনের শীতবস্ত্রের বিপুল সমারোহ। পছন্দমতো দামে গরম কাপড় কিনছেন ক্রেতারা। শীতের শুরুতেই বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিক্রেতারা।
কাপড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা পুরোনো কাপড়গুলো বাইরের দেশ থেকে জাহাজে করে চট্টগ্রামে আনেন। সেখান থেকে খুচরা বিক্রেতারা কিনে এনে বিক্রি করেন। প্রতি শীতে অগ্রহায়ণ থেকে এ কাপড়ের চাহিদা শুরু হয়ে অব্যাহত থাকে মাঘের শেষ পর্যন্ত।
বিজ্ঞাপন
বাজারে ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে পুরোনো জ্যাকেট কিনতে এসেছেন নজরুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরিব মানুষ আমরা। এখানে যে পুরোনো জ্যাকেট ৩০০ টাকা, তা নতুন কিনতে গেলে ৩ হাজারেও পাওয়া যায় না। নতুন হোক আর পুরোনো, শীত না লাগলেই হলো। তাই ছেলেকে নিয়ে এসেছি জ্যাকেট কিনতে। শরীরে ফিট হলেই কিনে নিয়ে যাব।
বিজয় মেলা প্রাঙ্গণের পাশের ফুটপাতের ব্যবসায়ী আবুল কালাম ঢাকা পোস্টকে জানান, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের লোকজনের ভরসা এসব দোকান। তার দোকানে ২০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা দামের শীতের কাপড় রয়েছে। তবে এক শ থেকে দুই শ টাকার পোশাক বেশি বিক্রি হয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কম দামে পছন্দের পোশাক কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা। আশানুরূপ লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও।
বিজ্ঞাপন
হকার্স মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা বছর অন্য কাপড় বিক্রি করলেও এই মৌসুমে শুধু শীতের কাপড়ই বিক্রি করি। তবে এখনো আশানুরূপ বিক্রি শুরু হয়নি। অনেক ক্রেতা এসে পছন্দের কাপড় কিনলেও অনেকে দেখে চলে যাচ্ছেন। শীত কিছুটা বাড়লে বিক্রি আরও বাড়বে।
মাইজদী সুপার মার্কেটে ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনো তীব্র শীত পড়েনি। তবুও গত এক সপ্তাহ ধরে নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন শীতের পোশাক কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশি। শীত বাড়লে গতবারের চেয়ে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি।
দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে ফরহাদ মিয়া নামের এক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক দোকানে গত কয়েক বছর আগের শীতের কাপড় এবারের নতুন কালেকশন বলে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া শপিং মলগুলোতে গত বছরের চেয়ে দামও অনেক বেশি। ফলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের লোকজন ছুটছেন নতুন কিংবা পুরাতন শীতের কাপড়ের বিভিন্ন দোকানে।
এ বিষয়ে নোয়াখালী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীত উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও নতুন নতুন পোশাক বাজারে এসেছে। তবে এখনো সব বিপণিবিতানগুলো জমে ওঠেনি। শীতের প্রকোপ আরও বাড়লে শীতের কাপড় বিক্রির ধুম পড়বে। তবে এ সুযোগে কোনো ব্যবসায়ী যাতে বাড়তি দাম নিতে না পারে, সেজন্য বাজার মনিটরিং করা হবে।
এদিকে, ঠান্ডার কারণে বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়তে শুরু করেছে।
নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে প্রতিদিনই নবজাতক ও শিশু রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। এদের বেশির ভাগ সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত। ফলে শীতের এই সময়ে শিশুদের গরম কাপড় পরালে শীত থেকে রক্ষা পাবে। এতে ঠান্ডাজনিত রোগও আক্রমণ করতে পারবে না।
হাসিব আল আমিন/এমজেইউ