ওবায়দুল কাদেরের বই লিখে বছরে আয় ৪ লাখ টাকা, নগদ আছে ৮০ হাজার
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসন থেকে নির্বাচন করছেন। তিনি এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। আসনটি থেকে তার ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে হলফনামাসহ মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
হলফনামায় উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে নগদ ৮০ হাজার ও তার স্ত্রীর কাছে আছে ৭০ হাজার টাকা। বই লিখে তিনি বছরে চার লাখ ২৫ হাজার ৩০০ টাকা আয় করেন। ও মন্ত্রী হিসেবে বছরে বেতন ভাতা বাবদ আয় ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ বাৎসরিক আয় ১৪ লাখ ২৪ হাজার ৯২৪ টাকা। একই খাতে তার স্ত্রীর আয় তিন লাখ ৯৬ হাজার ৯৬৬ টাকা।
আরও জানা গেছে, ওবায়দুল কাদেরের নিজ নামে ছয় লাখ ৯৭ হাজার ২৮৪ টাকার ও স্ত্রীর নামে চার লাখ ৮০ হাজার ৯২২ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। নিজের ব্যবসা খাতে বাৎসরিক কোনো আয় না থাকলেও স্ত্রী ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় করেন ৮৬ হাজার ৭২৭ টাকা। এছাড়া আইন পেশা থেকে বছরে দুই লাখ ৫৮ হাজার ৯০০ টাকা আয় করেন ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী।
হলফনামা সূত্রে আরও জানা গেছে, ব্যাংকে ৭৫ লাখ ৬৩ হাজার ৬০৫ টাকা আছে ওবায়দুল কাদেরের। আর স্ত্রীর নামে ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৯ টাকা জমা আছে। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে ওবায়দুল কাদেরের বিনিয়োগ রয়েছে এক কোটি ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ২৯৩ টাকা ও তার স্ত্রীর বিনিয়োগ রয়েছে ৭৩ লাখ ৬২ হাজার ৮১৫ টাকা। কাদেরের নিজ নামে রয়েছে ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের একটি গাড়ি, এক লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার, ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও আট লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। স্ত্রীর নামে রয়েছে এক লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার, ১২ হাজার টাকার টিঅ্যান্ডটি, মোবাইল ও এক লাখ টাকার আসবাবপত্র। এছাড়া উত্তরায় নিজ নামে ৫০ লাখ ৭৯ হাজার ৬০০ টাকা মূল্যের পাঁচ কাঠা জমি ও স্ত্রীর নামে ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ১০৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলেও হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা যায়, এবার নোয়াখালী-৫ আসনে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি আরও চার প্রার্থী মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছেন। সব তথ্যাদি সঠিক থাকায় পাঁচজনকেই বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। তারা হলেন, জাতীয় পার্টি থেকে ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ থেকে মোহাম্মদ মকছুদের রহমান, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (আইএফবি) থেকে মোহাম্মদ শামছুদ্দোহা এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) থেকে শাকিল মাহমুদ চৌধুরী।
ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের মির্জা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বাংলাদেশের গর্ব। তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি বৃহত্তর নোয়াখালীর উন্নয়নেও ভূমিকা রেখেছেন। তিনি নোয়াখালীর দুঃখ নামে খ্যাত নোয়াখালী খাল খননের মধ্য দিয়ে এখানকার কৃষিসহ সব উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে তিনি ৫৮৮ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করিয়েছেন। এই প্রকল্পের ফলে নদী ভাঙন রোধ হবে, নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি উদ্ধার হবে এবং উড়িরচরের সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জের মূল ভূখণ্ডের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে উড়িরচরের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হবে।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালী-৫ আসনে ৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন এবং ৫ জনই বৈধ প্রার্থী হন। নোয়াখালীর মোট ৬ আসনে ৫৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৮ জনের মনোনয়ন বাতিল হয় এবং ৩৭ জনের মনোনয়ন বৈধ হয়। যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে, সেগুলো যৌক্তিক কারণেই বাতিল করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর। মনোনয়ন ফরম বাছাই হয় ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করতে হয়। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে।
হাসিব আল আমিন/আরকে