পাঁচ বছরে রাঙ্গাঁর নগদ অর্থ বেড়েছে ১৬ গুণ
গত পাঁচ বছরে জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর নগদ অর্থ বেড়েছে প্রায় ১৬ গুণ। একই সঙ্গে তার জমিসহ স্থাবর সম্পত্তিও বেড়েছে। পাঁচ বছর আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো অর্থ জমা না থাকলেও এবার এক কোটি ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯৩ টাকা দেখিয়েছিলেন তিনবারের এ সংসদ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর হলফনামায় ব্যাংক ঋণ দেখানো হয়েছিল ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪১৫ টাকা। তার কৃষি খাত থেকে আয় হয়েছিল বছরে এক লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৮ টাকা। এ ছাড়া, বাড়িভাড়া পেতেন ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৭ টাকা। ব্যবসা-বাবদ তার আয় ছিল ৪৪ লাখ ৬৯ হাজার ৩৫ টাকা। চাকরি খাতে তার আয় দেখানো হয়েছিল ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৮০ টাকা।
অন্যান্য খাতে আয় ছিল দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৩২ টাকা। এ ছাড়া, রাঙ্গাঁর স্থাবর সম্পদ, কৃষিজমি, আবাসিক ও বাণিজ্যিক দালান ও ফিলিং স্টেশন রয়েছে, যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। পেশায় পরিবহনমালিক ও সাধারণ ব্যবসায়ী দাবি করা এ রাজনীতিকের নামে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় কোনো মামলা ছিল না। তবে, এবার তার হলফনামায় মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় রাঙ্গাঁ উল্লেখ করেছিলেন, তার নগদ অর্থ ছিল ২৭ লাখ ৮ হাজার ৫৪৬ টাকা। পাঁচ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি ২৪ লাখ ৬ হাজার ৬২৮ টাকায়। পাঁচ বছর আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ছিল ৮৯ লাখ ৫৬ হাজার ৯৩৪ টাকা। এবারের হলফনামায় তা দেখানো হয়েছে দুই কোটি এক লাখ চার হাজার ২১৫ টাকা।
পাঁচ বছরে বেড়েছে জমিসহ স্থাবর সম্পত্তিও। ২০১৮ সালের হলফনামায় জমির পরিমাণ ১২ একর ৩৩ শতক দেখানো হয়েছিল। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ একর ৫৪ শতকে। পাঁচ বছর আগে কৃষি, অকৃষিজমি, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, বাগান ও খামারের মূল্য ও আয় ছিল তিন কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার ২৭৫ টাকা। এবার দেখানো হয়েছে চার কোটি ৪৭ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩৬ টাকা।
২০১৮ সালে তার ব্যাংকঋণ দেখানো হয় ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪১৫ টাকা। এবারের হলফনামায় ব্যাংকঋণ দেখানো হয়েছে এক কোটি ৭৬ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৭ টাকা। আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন, কৃষিখাত, বাড়ি ও দোকান ভাড়া, ব্যবসা, চাকরিসহ শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র।
রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও আংশিক সিটি) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা বি কম পাস। তিনি এ আসন থেকে ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন।
রওশন এরশাদপন্থি জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছায়ের দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলার কাগজপত্র না দেওয়ায় তার মনোনয়নপত্র সাময়িক স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে উপযুক্ত কাগজপত্র জমা দেওয়ায় তা বৈধ ঘোষণা করা হয়। এ আসন থেকে এবার জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত রেজাউল করিম রাজু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু ছাড়া বিভিন্ন দলের আরও সাত প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে বৈধ হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে