কোটি টাকার সম্পদের মালিক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী, হতে চান এমপি
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে এবার নানা কারণে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মোছা. শাহাজাদী আলম লিপি। তফসিল ঘোষণার অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় নিজেকে কোটি টাকার সম্পদের মালিক বলে উল্লেখ করেছেন এই প্রার্থী।
শাহজাদী আলম লিপির স্বামী হামিদুল আলম মিলন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে কর্মরত। হলফনামায় মিলনের সম্পদের পরিমাণও উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশে চাকরি করা এই কর্মকর্তা এখন ৩ কোটি ৫৬ লাখ ২৪ হাজার ৭১৯ টাকা সম্পদের মালিক।
এইচএসসি পাস লিপি হলফনামায় পেশা হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। নদী ভাঙনকবলিত সারিয়াকান্দির হাটশেরপুর এলাকার বাসিন্দা লিপির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স মেধা এন্টারপ্রাইজ। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছেন। নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হলফনামায় আয়ের উৎস হিসেবে লিপি কৃষি খাত থেকে বছরে ৫০ হাজার ২০০ টাকা আয় করেন বলে উল্লেখ করেছেন। তার স্বামীর কৃষি খাত থেকে আয় ৪ লাখ ৫৮ হাজার ২০০ টাকা। লিপি বাড়ি ভাড়া পান ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তার স্বামী পান ৬ লাখ ১ হাজার ২০০ টাকা। স্বামীর চাকরি থেকে বছরে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬০ টাকা আয় হয় বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য খাতে স্বামীর কোনো আয় না থাকলেও স্ত্রী লিপি আয় করেন ৫৭ হাজার ৯৬৬ টাকা। লিপির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও এ খাত থেকে আয়ের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি।
অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে লিপির নগদ টাকা রয়েছে ২৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯০৫ টাকা। তার স্বামীর কাছে নগদ টাকা আছে ২ কোটি ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৯। লিপির স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা মিলনের ব্যাংকে ৪১ হাজার ৯১৭ টাকা গচ্ছিত থাকলেও লিপির ব্যাংকে রয়েছে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৯০৫ টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী স্ত্রী লিপির চেয়ে স্বামীর অলংকার বেশি। লিপির ১০ তোলা অলংকার থাকলেও স্বামী মিলনের রয়েছে ৫০ তোলা। তবে এটি কী ধরনের অলংকার সেটি উল্লেখ নেই হলফনামায়। এমনকি মূল্যও উল্লেখ করা হয়নি।
ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী লিপির নামে রয়েছে ৩০ হাজার টাকার। তার স্বামীর রয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার টাকার। ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে লিপির। বিপরীতে স্বামীর রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র।
লিপি হলফনামায় বলেছেন, তার ২৫৯ দশমিক ৬৯ শতক জমি রয়েছে। যার দাম উল্লেখ করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা। অন্যদিকে তার স্বামীর কৃষি জমি রয়েছেন ১২১৪ শতক (১২ একরের বেশি)। এই জমির দাম মাত্র ৪ লাখ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
১০১ দশমিক ৫৭ শতক অকৃষি জমির মালিক লিপি। যার দাম উল্লেখ করা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার ২৪০ টাকা। তার স্বামী মিলনের ২৫২ দশমিক ৫৩৬ শতক জমি রয়েছে। যার মূল্য ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ২৮০ টাকার বলে দাবি করা হয়েছে।
স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে লিপির একটি পাঁচতলা দালান। এটি হেবা সূত্রে (বিনা মূল্যে দানপত্র) পাওয়া বলে উল্লেখ করেছেন। আছে নির্মাণাধীন আরও একটি বাড়ি। রয়েছে তিনটি দোকান। লিপির স্বামীর রয়েছে একটি পাঁচতলা দালান, একটি আধাপাকা বাড়ি। তবে হেবা বা দানপত্র সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে কোনো মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।
যমুনা নদীর কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের রাজনৈতিক পরিসংখ্যান বহুমাত্রিক। আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল পাঁচবার। বিএনপি থেকেও পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। জাতীয় পার্টিও ক্ষমতায় এসেছিল একবার।
বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি হলেও নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় সমীকরণ এবার বদলে গেছে। আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান, বিএনপির সাবেক নেতা মো. শোকরানাসহ এখন পর্যন্ত ১১ জন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন বলে জানা গেছে।
আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/আরএআর