নৌকা পাওয়ার দৌড়ে ময়মনসিংহ বিভাগে এগিয়ে যারা
ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় সংসদীয় আসন রয়েছে ২৪টি। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ২৯১ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। যেখানে ময়মনসিংহের ১১ আসনে ১৪৪ জন, নেত্রকোণায় ৭১, জামালপুরে ৩৮ ও শেরপুর থেকে ৩৮ জন নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এরই মধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড।
রোববারের (২৬ নভেম্বর) মধ্যে প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের কথা জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, জনসম্পৃক্ততা এবং দলের জন্য ত্যাগ রয়েছে এমন নেতাদেরকেই নৌকা তুলে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে বাদ পড়তে পারেন একাধিক সংসদ সদস্যও, দেখা যেতে পারে নতুন মুখ। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগমুহূর্তে চা-আড্ডা থেকে শুরু করে সবখানেই এখন নির্বাচনী আলোচনায় নানা চুলছেঁড়া বিশ্লেষণে ব্যস্ত সবাই।
ময়মনসিংহ
ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া নিয়ে ময়মনসিংহ-১ আসন। এ আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য প্রয়াত প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে বর্তমান এমপি জুয়েল আরেং। তিনি ছাড়াও দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ ভোটারদের কাছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতার তালিকায় থাকা ত্যাগী রাজনীতিক ফারুক আহমেদ খান মনোনয়ন দৌড়ে আছেন। ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী নীলুফার আনজুম পপি, উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ সাহা মনোনয়ন দৌড়ে আছেন।
ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু নৌকার মাঝি হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন। যদিও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে এবারো আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের মাথাব্যাথার কারণ হিসেবে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন ফের নৌকা চাইছেন। তবে তার ছেলে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক সেলিম ও মেয়ে সেলিমা আক্তার সালমাও মনোনয়ন কিনেছেন। তবে এ আসনটিতে ছয়বারের এ সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিনের পাশাপাশি এবং উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক এগিয়ে আছেন।
ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনটি স্বাধীনতার পর বেশিরভাগ সময় আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। অতীতে যারা নৌকা পেয়েছেন, তারাই এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবার জেলার মধ্যে এ আসনেই সবোচ্চ ২২ জন মনোনয়ন আ.লীগের মনোনয়ন কিনেছেন। তবে এ দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান এমপি হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী এবং জেলা আ.লীগের সহসভাপতি ও ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আমিনুল হক শামীম (সিআইপি)। ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে বর্তমান এমপি জাপার ফখরুল ইমাম এলাকার প্রত্যাশিত উন্নয়নে কোনো চমক দেখাতে পারেননি। উন্নয়ন বঞ্চনার কারণে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি নেতাকর্মীদের। ফলে এবার এই আসনটি ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ নেতারা। এখান থেকে নৌকার মনোনয়ন দৌড়ে সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস ছাত্তার এগিয়ে আছেন।
ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন ও সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব) আব্দুস সালামের নেতৃত্বে দুই ধারায় বিভক্ত নেতাকর্মীরা। এখানে থেকে ১৭ জন মনোনয়ন কিনলেও বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিনই এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে। ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে ১৫ জন নৌকা চাইলেও বর্তমান সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল এগিয়ে আছেন। তবে মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলও। ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে দ্বিতীয় সবোচ্চ ২১ জন মনোনয়ন চাইছেন। তবে বর্তমান এমপি কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।
নেত্রকোণা
হাওর-নদী-পাহাড় বেষ্টিত নেত্রকোণা জেলার ১০ উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ৫টি আসনে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন ৭১জন। নেত্রকোণা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মানু মজুমদার, সাবেক সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ (রুহী) মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। নেত্রকোণা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসন থেকে নৌকা চাওয়া ১৯ জনের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ও সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু, অবরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল নূর খান, জেলা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রয়, সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় মনোনয়ন দৌড়ে আছেন।
নেত্রকোণা-৩ (আটপাড়া-কেন্দুয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, সুপ্রীম কোর্টের আনজীবী ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি অ্যাড আব্দুল মতিনের মধ্যে একজন মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। নেত্রকোনা-৪ (মদন- মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আসনে গত উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়া সাজ্জাদুল হাসান ফের নৌকা পাচ্ছেন। নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন।
জামালপুর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুরে ৫টি সংসদীয় আসনে নৌকার মাঝি হতে ৩৮ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সাবেক আমলা। তাদের মধ্যে জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসনে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল, জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনে সংসদ সদস্য মির্জা আজম, জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান হেলাল, জামালপুর-৫ (সদর) আসনে সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোজাফ্ফর হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য মারুফা আক্তার পপি এগিয়ে আছেন।
শেরপুর
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার লক্ষ্যে শেরপুর জেলার তিনটি আসন থেকে ৩৮ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে শেরপুর-১ (সদর) আসন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানু এগিয়ে আছেন।
শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরীই মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুব উপকমিটির সদস্য, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুস সামাদ ফারুকের নামও আলোচনায় রয়েছে।
শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার একে এম ফজলুল হক, শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম, ঝিনাইগাতী উপজেলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেছ নাইম মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন।
আরকে