ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দুই ছেলেও চান মনোনয়ন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ঝাঁপ। এবার ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর মরহুম দবিরুল ইসলামের দুই সন্তান। এই আসনে বড় ছেলে আহসান হাবিব বুলবুল ও ছোট ছেলে আহসান উল্লাহ ফিলিপ মনোয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন ।
আহসান উল্লাহ ফিলিপ নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক পরিচয়ে বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রাণীশৈংকেল উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের মাঠ পর্যায়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনার দায়িত্বেও ছিলেন। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের তৃণমূল মানুষের কাছে একজন পরিচিত নাম আহসানুল্লাহ ফিলিপ। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছেন তিনি। নির্বাচনী মতবিনিময় ও গণসংযোগকালে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরেন।
আহসান হাবিব বুলবুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে এর আগে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছিলেন কিন্তু এখানকার আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারণে হেরে যাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে এবার ঠাকুরগাঁও ২ আসনে সংসদে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি ঠাকুরগাঁও ২ আসনের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারব।
ছোট ছেলে আহসান উল্লাহ ফিলিপ বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাজ করেছেন। আমি নিজেও বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করে যেতে চাই। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আশা করি বিজয়ী হব। আমার যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে নির্বাচনী এলাকায় মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করব। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানাই।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষেরা আমাকে চান। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে। আমি আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দিয়ে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিবেন।
নিজের বাবার সম্পর্কে আহসান উল্লাহ ফিলিপ বলেন, বাবা ছিল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের জন্য বিভিন্ন সংগ্রাম করেছেন। আমি তার যোগ্য সন্তান। বর্তমানে আওয়ামী লীগের অনেক হাইব্রিড নেতা তৈরি হয়েছে। যারা দলের সুদিনে দলের কাছে ভিড়েছে কিন্তু আমরা ছিলাম দুর্দিনের কাণ্ডারি। তৃণমূলে আমি যেভাবে এর আগেও কাজ করেছি একইভাবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যেতে চাই। আমার মায়ের অনেক আশা ছিল, আমি বাবার মতো সংসদ সদস্য হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে পারব।
জানা গেছে, ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৯ সালের ৪ জানুয়ারি প্রথম কাউন্সিল অধিবেশনে দবিরুল ইসলাম সংগঠনের সভাপতি (১৯৪৯-১৯৫৩) নির্বাচিত হন। সেই সময় তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন অন্যতম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী ছিলেন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাকেও বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তিনি ঠাকুরগাঁও থেকে এম.এল.এ নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রমবিষয়ক পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। জেলে পাকিস্তান সরকারের নির্মম নির্যাতনের কারণে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন দবিরুল ইসলাম। এ অবস্থায় ১৯৬১ সালের ১৩ জানুয়ারি মাত্র ৩৮ বছর বয়সে মারা যান বঙ্গবন্ধুর এই ঘনিষ্ঠ সহচর।
আহসান উল্লাহ ফিলিপের জন্ম ১৯৬১ সালের ২০ মে। তিনি ১৯৭৬ সালে এসএসসি পাশ করার পর নানার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় অনার্স, মার্ষ্টাস ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্র জীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
২০১৮ সালে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ দবিরুল ইসলামের পরামর্শে সে বছর তিনি নির্বাচন থেকে পিছিয়ে যান। পিতার আদর্শকে ধারণ করে নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদ হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী তিনি।
আরিফ হাসান/এএএ