হরতাল-অবরোধের অজুহাতে সবজির দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা
দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে সবজি চাষিদের ওপর। হরতাল-অবরোধসহ নানা অজুহাতে কৃষকদের সবজির ন্যায্যমূল্য দিচ্ছেন না ব্যাপারীরা। ফলে নিরুপায় হয়ে মোকামের ব্যাপারীদের কাছে কম দামে সবজি বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে কৃষকদের।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সবজির মোকাম যশোরের সাতমাইল মোকাম ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এই মোকামে শীতকালীন সবজির মধ্যে মুলার আমদানি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে মুলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে। এছাড়াও এই মোকামে চাষিদের ফুলকপি বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩২ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকা, লাউ ৩১ থেকে ৩৫ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, দেশি কাঁচামরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে।
পার্শ্ববর্তী ঝনঝনে গ্রাম থেকে ৭ মণ মুলা নিয়ে সাতমাইল মোকামে এসেছেন আবুল হোসেন। তিনি জানান, হাটে আসার পর ব্যাপারীরা তার মুলার সর্বোচ্চ দাম বলেছে ১০ টাকা। নিরুপায় হয়ে ১০ টাকা কেজি দরে মুলা বিক্রি করেছেন তিনি।
একই গ্রাম থেকে দুই মণ বাঁধাকপি নিয়ে মোকামে আসেন কৃষক তরিকুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত সপ্তাহ খানেক আগে বাঁধাকপির দাম ছিল কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আজ সকালে একটু বৃষ্টি হয়েছে, ওমনি ব্যাপারীরা নানা অজুহাতে ১০-১৫ টাকা কেজি দরে আমাদের কাছ থেকে বাঁধাকপি ক্রয় করছে। এভাবে দাম চললে বিঘা প্রতি আমাদের ৮-১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে।
সাহবাসপুর গ্রামের কৃষক সেলিম হোসেন বলেন, আমরা মাঠ থেকে সবজি নিয়ে মোকামে গেলে নানা অজুহাতে দাম পাই না। আমাদের চোখের সামনে ব্যাপারীরা কম দামে সবজি কিনে বেশি দামে বাহিরের জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। এভাবে প্রতি বছর কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়।
মির্জাপুর গ্রামের রকিবুদ্দিন সাতমাইল মোকামে দুই মণ দেশি কাঁচামরিচ নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, আমরা তো কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করছি। কিন্তু খুচরা বাজারে গিয়ে দেখছি কাঁচামরিচের দাম প্রতি কেজি ১২০-১৫০ টাকা। তাহলে লস আমাদের হচ্ছে, আর হাতবদলের কারণে লাভ হচ্ছে ব্যাপারী এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের।
সাতমাইল সবজির মোকামে সবজি নিয়ে আসা শ্যামল বিশ্বাস বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব সবজির দাম ১০-১৫ টাকা কমেছে। লাউ, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি সবকিছুর দাম কম। এতো কম হলে কৃষকরা শেষ। কৃষকদের শেষ করে অনান্য ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।
এদিকে ব্যাপারীরা বলছেন, হরতাল-অবরোধে সবজিবাহী ট্রাক যশোর থেকে সবজি নিয়ে দূরের জেলাগুলোতে যেতে চায় না। সেক্ষেত্রে তাদের ট্রাক ভাড়া ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি দেওয়া লাগছে। একদিকে পরিবহন খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে শীতকালীন সব রকমের সবজি বাজারে উঠে যাওয়ায় সবজির দাম কমেছে।
সাতমাইল সবজির মোকামের ব্যাপারী তুহিন হোসেন বলেন, বগুড়া, ঈশ্বরদীর মুলা বাজারে উঠে গেছে, এ কারণে আমাদের এ অঞ্চলের উৎপাদিত মুলার দাম কমে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় মুলার দাম ১০-২০ টাকা কমেছে।
দেলোয়ার রহমান নামে এক ব্যাপরী বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে ট্রাকওয়ালারা সবজি নিয়ে যেতে চায় না। বেশি ভাড়া চায়। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় আমাদের কম দামে সবজি কিনতে হচ্ছে।
পলাশ হাসান নামে আরেক ব্যাপারী বলেন, পরিবহন খরচ এখন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি লাগছে। খরচ পোষাতে কম দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। তাছাড়া এখন সব রকমের শীতকালীন সবজি বাজারে ভরপুর উঠে যাওয়ায় সব রকম সবজির দাম কমেছে।
এ্যান্টনি দাস অপু/আরএআর