সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে কব্জি উড়ে যায় পুলিশ সদস্যের
গাজীপুরের নাওজোড় এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) কারের ভেতর সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের ডান হাতের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (৮ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো নাওজোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। অসাবধানতাবশত এপিসি কারের ভেতর সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে আহত হন তিন পুলিশ সদস্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কারখানা শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, সফিপুর ও মৌচাকসহ আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। বুধবার সকালেও আন্দোলনে নামেন পোশাকশ্রমিকরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিক নিহত হন। এরপর বেশ কয়েক ঘণ্টা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক ছিল।
দুপুরের পর কোনাবাড়ী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আবার সংঘর্ষে জড়ান শ্রমিকরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য গুরুতর আহত হন। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র্যাবের সমন্বয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া দেওয়া হয়। এসময় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। শ্রমিকরা পিছু হটে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ভাওয়াল বদলে আলম সরকারি কলেজের সামনের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম জানান, আহতাবস্থায় পাঁচজন পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত পুলিশ সদস্য প্রবীর (৩০), ফুয়াদ (২৮) ও খোরশেদকে (৩০) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আশিকুল (২৭) ও বিপুলকে (২৪) হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ফুয়াদের অবস্থা বেশি গুরুতর, তিনি ডান হাতের আঙ্গুল ও কব্জির নিচের অংশে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এপিসি কারের ভেতরে পুলিশ সদস্যদের অসাবধানতায় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা আহত হন। একজনের হাতের কব্জি মারত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই বিস্ফোরণে।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, বুধবার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মোট আটজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সকালে কোনাবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন ও বিকেলে নাওজোড় এলাকায় পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচজন আহত হয়েছেন। বিকেলে যে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন তাদের মধ্যে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষের দুইজন ও এপিসি কারে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে আরও তিনজন আহত হওয়ার ঘটনা আছে। তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সন্ধ্যায় শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে গেলে পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে যায়।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো আলাউদ্দিন বলেন, গাজীপুর থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজন পুলিশকে জরুরি বিভাগে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে ফুয়াদ নামে এক পুলিশ সদস্যের ডান হাতের কব্জি উড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শিহাব খান/আরএআর