বৃদ্ধ বয়সেও সংসার চালাতে চানাচুর বিক্রি করেন সেকেন্দার আলী
ভাঙাচোরা, লোহা লস্কর ও প্লাস্টিকের বোতলের বিনিময়ে দেন চানাচুর, আচার কিংবা শন পাপড়ি। আর সেগুলো বিক্রি করেই অতি কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করেন ৭০ বছর বয়সী সেকেন্দার আলী। এই বৃদ্ধ বয়সেও বিশ্রামের সুযোগ নেই তার। এই পুরোনো ভাংরি বিক্রি করে যা হয় তা দিয়েই চলে স্ত্রী ও নিজের ওষুধ এবং সংসারের খরচ।
সেকেন্দার আলী সরদারের বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাষ্টঘর এলাকায়। তিনি ঐ এলাকার মৃত দলিলউদ্দীন সরদারের ছেলে। সেকেন্দার আলীর তিন ছেলে ও তিন মেয়ে থাকলেও তারা ব্যস্ত নিজের সংসার নিয়ে। মাত্র ৪ শতক জমিতে জরাজীর্ণ একটি টিনশেড ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে অতিকষ্টে বসবাস করছেন।
প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে ঝাল চানাচুর ও আচার বিক্রি করে আয় করেন মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। চানাচুর বিক্রির সামান্য আয়ে স্বামী-স্ত্রীর কোনো রকমেই দু’বেলা দু-মুঠো খাবার। এদিকে তার শরীরের অবস্থা ভালো নেই। শরীর অসুস্থ থাকার পরেও তিনি জীবন-যুদ্ধে কখনো হার মানেননি। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভাঁড়ের এক ঢালায় ঝাল চানাচুর অন্য ঢালায় আচার ও শন পাপড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন।
সেকেন্দার আলী বলেন, আমার কষ্টের জীবন। চানাচুর, আচার ও শন পাপড়ি বিক্রি করেই তিন ছেলে ও তিন মেয়েকে মানুষ করেছি। তাদের বিয়ে দিয়েছে। এখন তারা তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ছেলে-মেয়ে কেউ আর খোঁজ খবর নেয় না। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে সংসার ও ওষুধ কিনতে কিনতে অবস্থা খারাপ। অনেক সময় ধার-দেনা করে চলতে হয়। শেষ বয়সে এসেও দু-মুঠো খাবারের জন্য এসব করতে হচ্ছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী বয়স্ক ভাতা পাই না। বয়স্ক ভাতা পেলে একটু কষ্ট কম হতো। এখন চানাচুর বিক্রি করে যে দুই টাকা আয় হয় তাই দিয়ে অতিকষ্টে বেঁচে আছি। একমাত্র থাকার ঘরটিও অবস্থা ভীষণ নাজুক। চাটাইয়ের বেড়া ও টিনের তৈরি ঘরটিও জরাজীর্ণ। চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর এবং কালকিনি মেয়রের কাছে আমার দাবি, তারা যেন বয়স্ক ভাতা করে দেন।
মাদ্রা এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা মো. ফিরোজ হাওলাদার বলেন, বৃদ্ধ লোকটিকে মাঝে মাঝে দেখি আমাদের এই এলাকা দিয়ে আচার চানাচুর বিক্রি করেন। যদিও এ বয়সে ফেরি করে এসব বিক্রি করা সত্যিই কষ্টের।
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, বৃদ্ধের ছেলেমেয়েরা এদেরকে কেন ভরণপোষণ দেয় না আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
এ ব্যাপারে কালকিনি পৌরসভার মেয়র এস এম হানিফ বলেন, এই বৃদ্ধ ফেরিওয়ালার বয়স্ক ভাতা পান না তা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তাকে আমাদের সঙ্গে একটু যোগাযোগ করতে বলেন অবশ্যই তাকে ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
রাকিব হাসান/এএএ