ফের নতুন স্বপ্ন নিয়ে তাদের সমুদ্রযাত্রা
সাগরে মাছ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে হওয়ায় আবারও নতুন স্বপ্ন নিয়ে সমুদ্রযাত্রা করেছে ফেনীর উপকূলীয় এলাকা সোনাগাজীর জেলেরা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে জেলে পাড়ায়। সাগরে মাছ আহরণ করে আবারো পরিবার নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারবেন এমন আশা তাদের।
শুক্রবার সোনাগাজীর উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয় জেলে নয়ন দাস বলেন, মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে আমাদের কষ্টের আর শেষ থাকে না। স্বল্প সময়ে বিকল্প পেশায় নিয়োজিত হতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। এই সময়ে পরিবারে নিজেদের খাওয়া বা ভরণপোষণের চেয়ে সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা পরিশোধ করা সবচেয়ে কষ্টের।
রবীন্দ্র কুমার জলদাস নামে আরেক জেলে বলেন, চলতি মৌসুমে ফেনী উপকূলে তুলনামূলক ইলিশ কম পেয়েছি। তারমধ্যে আবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় একবারে ঘরে বসা। গত কয়েকদিন আগে থেকে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুতি চলছে। প্রাণহীন থাকা জেলে পল্লীগুলোতে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে।
জেলেপাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণধন সর্দার বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাত্র ২৫ কেজি চাল দিয়ে কোনোভাবেই আমাদের সংসার চলে না। এ জেলেপাড়ায় ৮৫টি পরিবারের ৫শর বেশি সদস্য কষ্টের জীবনযাপন করতে হয়। এখানে মাছ ধরার বড় ইঞ্জিন নৌকা রয়েছে ১০টি। এছাড়া ছোট নৌকা রয়েছে ৭০টি।
আবছার নামে স্থানীয় একজন মাছধরার ট্রলার মালিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেনীর জেলেরা সুতার জাল ব্যবহার করে। অন্যদিকে একটি অসাধু চক্র ফেনীর বাইরে থেকে এসে মোহনায় নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে ২৫০ থেকে ৩০০ নৌকা নিয়ে মাছ ধরে। এতে আমাদের জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সোনাগাজী উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, সোনাগাজীতে তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা ১ হাজার ৬২৪ জন। তাদের মধ্যে ইলিশ মাছ ধরেন এমন জেলের সংখ্যা ২৫০ জন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় জেলেদের সচেতন করতে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে অভিযান পরিচালনাসহ মাঠপর্যায়ে থেকে নিয়মিত কাজ করেছি। আশা করি আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে সোনাগাজীর ২৫০ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ৬ জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এসময়ে মৎস্য বিভাগ সাগরে মাছ ধরা বন্ধে সচেষ্ট ছিল।
উল্লেখ্য, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ১১ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২ নভেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ২২ দিনের মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য বিভাগ।
তারেক চৌধুরী/এমএসএ