খাওয়া নিয়ে ছলচাতুরি, যা বললেন সেই নোমান
কখনো খাচ্ছেন আস্ত মুরগি, খাসির নলি, চীনা হাঁস ভুনা বা কখনো কোয়েল পাখির ১০০ ডিম। রয়েছে প্লেট ভর্তি কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ। খেয়ে সব সাবাড় করতে দেখা যায় নোমানকে। ফেসবুক বা ইউটিউবে খাওয়ার এমন ভিডিও দেখেন মিলিয়ন মিলিয়ন দর্শক। এতে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেন তিনি।
যদিও এত খাবার আসলেই নোমান খান কি না, তা নিয়ে মানুষের সন্দেহ দীর্ঘদিনের। অবশেষে সেই সন্দেহই সত্যি হয়েছে। আসলে সব খাবার তিনি খান না। মুখে নেওয়ার পর তা ফেলে দেন এবং ফেলে দেওয়ার অংশটুকু এডিট করে আপলোড করেন তিনি।
অবশ্য খাওয়া নিয়ে আব্দুল্লাহ আল নোমানের এমন ছলচাতুরি তিনি নিজেই প্রকাশ করেছেন। দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে- এমন উপলব্ধি এবং অনুশোচনা থেকেই সম্প্রতি একটি ‘আনকাট’ ভিডিও আপলোড করে খাওয়ার রহস্যটি খোলাসা করেন তিনি। যদিও পরবর্তীতে সেটি মুছে ফেলেছেন নোমান। তবে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে প্রচুর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে।
পরবর্তীতে আরেকটি ভিডিওতে নিজের অবস্থান তুলে ধরে নোমান জানান, মানুষের সঙ্গে আর প্রতারণা করে টাকা উপার্জন চান না তিনি। তাই বিষয়গুলো সবাইকে জানাতেই আনকাট ভিডিও ছেড়েছেন তিনি।
ওই ভিডিওতে নোমান বলেন, আসলে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। তার কারণ হলো- আমাকে নিয়ে অনেক মানুষ বাজে মন্তব্য করছে। অনেকে না বুঝেও করছে এবং রোস্টাররা রোস্ট করছে। আমি আপনাদের জানাবো আনকাট ভিডিও কেন আমি আপলোড করেছি এবং নিজের পায়ে নিজেই কেউ কুড়াল মারলাম। প্রথমত মিডিয়াতে বলেছিলাম যে আমি সব খাবার খাই। হাজার হাজার মানুষ মেসেজ করে যে, আপনি এত খাবার কীভাবে খান। অনেকে আসলে বিশ্বাস করতে পারে না যে এত খাবার আসলে খাই কি না। অনেকেরই মনে কৌতূহল জাগে।
তিনি বলেন, মানসিকভাবে আমি অনেক ডিপ্রেশনে ছিলাম, এই ভিডিওগুলো যে করছি আমি এগুলা তো এক প্রকার প্রতারণা হয়ে যাচ্ছে মানুষের সাথে। কারণ মানুষকে তো আমি বলিও না যে ভিডিওতে আমি কারচুপি করি। শুধু যে আমিই এডিট করি, কারচুপি করি তা কিন্তু না। বিশ্বের যারাই এমন ভিডিও বানায় তারা সবাই ভিডিও এডিট করে এভাবেই। অনেকেই নষ্ট করে খাবার আবার অনেকেই বোবা প্রাণীকে খাইয়ে ফেলে। যেমন আমি কুকুর এবং বিড়ালকে খাওয়াই যাতে নষ্ট না হয় খাবারটা।
যাই হোক আমি করোনার সময় কোনো চাকরি নিতে পারিনি। তারপর অনেক মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি চাকরি নেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা আমাকে একটা চাকরি দিতে পারে নাই। আমি টাকা পর্যন্ত দিয়েছি চাকরির জন্য। ওই টাকাও আত্মসাৎ হয়ে গেছে। তারপর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম যে আমি কী করবো। এরপর কোরিয়ান একজনের খাবার খাওয়ার ভিডিও দেখতাম। প্রথম দিকে আমি সব খাবারই খেতাম। কিন্তু সব খাবার খেয়ে আমি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর চিন্তা করলাম না এত খাবার তো খাওয়া যায় না। কিন্তু কম খাবার খেলে আবার মানুষ দেখে না। যখন বেশি খাবার নিলাম তখন ভিউও বাড়ছিল এবং প্রশ্নও বাড়ছিল।
মানুষের প্রশ্নে আমার টেনশনে বাড়ছিল কী করবো, কীভাবে বোঝাবো। আপনারাই চিন্তা করুন এত খাবার কি একটা মানুষ খেতে পারে কখনো? সবাই বুঝা উচিত এত খাবার কেউ খেতে পারে না। এগুলো এডিট হয় কিন্তু আমি এটি বলতে পারি নাই। বলতে না পেরেই আমার অনেক ঝামেলা তৈরি হয়েছে। আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না, ডিপ্রেশন কাজ করে। সব সময় মনে হয় আমি মানুষের সাথে প্রতারণা করছি।
আরও পড়ুন
প্রতারণা যাতে না হয় তাই সজ্ঞানে বিষয়টি খোলাসা করেছেন জানিয়ে নোমান বলেন, আমার অডিয়েন্স যারা আমাকে ভালোবাসে, বিশ্বাস করে ভিডিও দেখে তারা যাতে এই ভিডিওটি সম্পূর্ণটা দেখে বুঝে যে আসলে এই ভিডিওগুলা এমনই হয়। সেজন্যই আমি আনকাট ভিডিও দিয়েছিলাম। কিন্তু এটি যে এমন ভাইরাল হয়ে যাবে তা আমি কল্পনাও করতে পারি নাই। এতে মানুষ মেসেজে, কমেন্টে গালাগালি করছে। তারপর আমি বিভিন্ন চাপে পারিবারিক চাপে ওই ভিডিওটা ডিলিট করে দিই। সবাইকে একটি কথাই বলেছি- আমি প্রতারণা করে টাকা ইনকাম করতে চাই না।
দর্শকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন আপনাদের যদি আমার এই পেজটা ভালো না লাগে তাহলে আপনারা আনফলো করে দিতে পারেন। তাতে আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি ফেলে দেওয়া খাবারগুলো কুকুর-বিড়ালকে খাওয়াচ্ছি। যদি এটি অপচয় হয় তাহলে তো আমার বিচার হবেই। আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন। ভিডিওগুলো থেকে প্রাপ্ত টাকা থেকে আমি মসজিদ-মাদ্রাসা ও গরিব মানুষকে দান করি গোপনে। অনেকে বলছেন এত খাবার না খেয়ে গরিবদের দান করে দিতে। কিন্তু আমি যদি ইনকামই করতে না পারি তাহলে দান কীভাবে করবো। মোট কথা হলো, আমি চাই না মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা ইনকাম করি। মানুষ বিশ্বাস করে ফেলে যে এত খাবার খেয়ে ফেলে, কিন্তু আসলে যারাই এমন ভিডিও করে তারা কেউই এত খাবার খায় না। এটিই আপনারা জেনে রাখেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, এ নিয়ে মিডিয়ায় কোনো কথা বলবো না।
আব্দুল্লাহ আল নোমান ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া সরকারি পুকুরপাড় এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। বর্তমানে তিনি কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদরাসায় ফাজিলে পড়ছেন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে নোমান সবার ছোট। আনসার ব্যাটালিয়নে চাকরি করতেন বাবা। ছোটবেলায় বাবার মৃত্যু হয়। এরপর বাবার চাকরির সুবাদে পাওয়া সামান্য পেনশনের টাকায় মায়ের কাছে বড় হয়েছেন নোমান।
গত ২০২০ সালে করোনার সময়ে সারা দেশের মানুষের মতো ঘরবন্দি হয়ে পড়েন নোমানও। তখন ঘরে বসে মোবাইল ফোনেই কাটতো তার সময়। হঠাৎ একদিন কোরিয়ান এক ব্যক্তির খাওয়ার ভিডিওতে কোটি ভিউ দেখে ভালো লাগে তার। এখান থেকেই খাবারের ভিডিও করার ধারণা পান নোমান। পরে ঘরে বসেই বেশি বেশি খাবার খাওয়ার ভিডিও ভাইরাল করার নেশা পেয়ে বসে তাকে। এরপর একাই পাঁচ বা ১০ জনের খাবার খাওয়ার ভিডিও বানিয়ে তা ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করতে থাকেন। হঠাৎ একদিন তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে নিয়মিত এমন ভিডিও প্রকাশ করায় বর্তমানে তার পেজের ফলোয়ার দেড় মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এতে প্রতি মাসে বর্তমানে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। দাপুনিয়া সরকারি পুকুরপাড় বাজারে তার আয়ের টাকায় দোতলা একটি ভবনের কক্ষ ভাড়া নিয়ে সেখানেই নিয়মিত ভিডিও করেন।
আরএআর