কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েটির দায়িত্ব পেলেন না সেই সোনিয়া
জন্মের কয়েক ঘণ্টা পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ছেলে। সেই শোকেই দিন কাটছিল মা সোনিয়া খাতুনের। ছেলের শোকে প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলেন সোনিয়া খাতুন। ছেলেকে হারিয়ে রাস্তায় নবজাতক এক কন্যা শিশুকে কুড়িয়ে পান তিনি। শিশুটিকে পেয়ে যেন মৃত সন্তানের শূন্যস্থান পূরণ হয়েছিল তার। তবে কুড়িয়ে পাওয়া সেই শিশুটির দায়িত্ব পাননি সোনিয়া।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মায়াধরপুর গ্রামের নিঃসন্তান দম্পতি সোহেল রানা ও ফাতেমা জাহানের কোলে ঠাঁই হয়েছে শিশুটির। গতকাল সোমবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দত্তক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উদ্ধার হওয়া নবজাতককে ওই দম্পতির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপমা রায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রশিদ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শীলা বেগম, ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুজ্জামান সবুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৬ অক্টোবর সকাল ৬টার দিকে সোনিয়া খাতুন নামে এক গৃহবধূ সড়কের পাশে একটি কাপড়ে মোড়ানো রক্তমাখা শরীরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ওই নবজাতককে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা প্রশাসন নবজাতককে তাদের হেফাজতে নেয়। সেই সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, নিষ্পাপ নবজাতক শিশুটিকে দত্তক নিতে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরই মধ্যে ৯ জন দম্পতি কমিটির নিকট আবেদন করেন। যাচাই-বাছাই শেষে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিশুটির সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণে সম্মতি প্রকাশ করায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মায়াধরপুর গ্রামের সোহেল রানা- ফাতেমা জাহান লতা দম্পতির নিকট শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয়।
তিনি আরও জানান, কমিটির পক্ষ থেকে পরবর্তী সময়ে শিশুটির যাবতীয় বিষয়ে খোঁজখবর ও তদারকি করা হবে। সেই সঙ্গে ওই দম্পতি শর্ত ভঙ্গ করলে নিয়ম অনুযায়ী দত্তক বাতিল করে নবজাতককে ফিরিয়ে নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের কুশনা গ্রামের মো. বকুল মন্ডলের তিন মেয়ের মধ্যে সোনিয়া খাতুন বড় মেয়ে। ৭ বছর আগে একই উপজেলার বলুহার রামচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে মো. রানা হামিদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের পরিবারে আবির নামে ৬ বছরের একটা ছেলে রয়েছে। সোনিয়ার পেটে বাচ্চা রেখে স্বামী রানা প্রবাসে (মালায়েশিয়া) গেছেন পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে। গত সেপ্টেম্বরে কোটচাঁদপুরের মাহাবুবা ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন সোনিয়া। কিন্তু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৯ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চাটি মারা যায়। সন্তান হারানোর শোকে কাতর হয়ে পড়েন।
এরই মধ্যে গত ২৬ অক্টোবর সকালে ছোট বোন জিনিয়াকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছিলেন। হাঁটতে গিয়ে দেখতে পান রাস্তার পাশে কাপড়ে মোড়ানো মেয়ে বাচ্চা পড়ে আছে। তখন সেই বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নেন সোনিয়া। সদ্যভূমিষ্ঠ ছেলে মারা যাওয়ার পর কুড়িয়ে পাওয়া এই মেয়েটিকে নিয়ে ছেলে হারানোর বেদনা ভুলেছিলেন সোনিয়া।
সোনিয়া খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়িতে আনার পর বাচ্চাটির গায়ের ময়লা পরিষ্কার করি, বুকের দুধ দেই। এরই মধ্যে জানাজানি হয়ে যায় বাচ্চাটির কথা। পুলিশ আসে এবং বাচ্চাটিকে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে। আমি ওকে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। ডাক্তার বাচ্চাটিকে দেখেন এবং বলেন সুস্থ আছে। ডাক্তার দেখানো হয়ে গেলে বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে আসার পর জানতে পারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কোটচাঁদপুর থানার ওসি ও সমাজসেবা কর্মকর্তা সবাই বাচ্চাটিকে অন্য জায়গাই দেওয়ার জন্য বলেছেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর