সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে সুযোগ পেয়েও ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় রাজিব
ছোট্ট একটি টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করি। মায়ের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল আমার পড়ালেখা। স্বপ্ন একটাই চিকিৎসক হতে হবে। ৪ মাস ধরে দৈনিক ৪ ঘণ্টা ঘুমিয়ে অবশেষে চান্স পেয়েছি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়। তবুও কাটছে না শঙ্কা। আর্থিক দৈন্যতাকে পেছনে ফেলে ভর্তি হতে পারব কিনা সেই চিন্তা আবারও কেড়ে নিয়েছে ঘুম। এমনটাই বলছিলেন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাওয়া দরিদ্র পরিবারের ছেলে রাজিব সরদার (১৮)।
রাজিব বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি এলাকার ভাড়াটিয়া মো. সোহরাব সরদার ও মেরুনা বেগম দম্পত্তির ছোট ছেলে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে এ বছর ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
মেধা তালিকায় রাজিবের স্থান ৪৮৫তম। কিন্তু ভর্তি হওয়া নিয়ে শঙ্কা কাটছে না পরিবারটির। কারণ ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী বাবার পক্ষে ভর্তির অর্থ জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় ছেলের লেখাপড়া চালাতে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন রাজিবের বাবা-মা।
রাজিব বলেন, ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে খুলনায় যাই। অর্থাভাবে ছোট্ট একটি টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। শীতে রাত জেগে পড়তে অনেক কষ্ট হতো। মাঝে মাঝে আর পড়তে ইচ্ছা করতো না। কিন্তু একটু পরই বাবার পরিশ্রমের চিত্র চোখের সামনে ভেসে ওঠত। রাত জেগে পাশে বসে থাকা মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার পড়া শুরু করতাম। পরিবারের স্বপ্ন পূরণ যে করতেই হবে। সব কষ্ট ভুলে যেতাম। আমার বাবা-মা আমাকে খুব কষ্ট করে বড় করেছে।
তিনি আরও বলেন, অল্প শিক্ষিত বাবা সব সময় বলত, দেখ আমি তো বেশি পড়ালেখা করতে পারিনি, কিন্তু তোর পড়তে হবে, মানুষ হতে হবে। প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব, তবু পড়াশুনা ছাড়তে দেব না। বাবার কথা আর মায়ের অনুপ্রেরণাতেই আমি রাতদিন পড়াশুনা করেছি। বন্ধুরা যখন আড্ডা দিত, ঘুরতে যেত, তখন আমি বাসায় থাকতাম। যখন খারাপ লাগত তখনই বই নিয়ে বসতাম বা মায়ের সঙ্গে গল্প করতাম। এতটুকুই ছিল আমার আড্ডা। একজন চিকিৎসক হয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোই জীবনের লক্ষ্য বলে জানান রাজিব সরদার।
রাজিবের বাবা মো. সোহরাব সরদার বলেন, আমার নিজের কোনো সহায়-সম্পদ নেই। ভাড়া বাসায় থাকি। মাছ বিক্রি করে দিন আনি, দিন খাই। অর্থাভাবে লেখাপড়া করতে পারিনি। আমার ছেলে যখন জন্মগ্রহণ করে তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যত কষ্টই হোক ওকে শেষ পর্যন্ত পড়াব।
মেডিকেলের পড়াশুনার জন্য রাজিবকে খুলনায় বাসা ভাড়া করে দিয়েছিলাম। তখন দুই জায়গায় বাসা ভাড়া দিতে গিয়ে কোনো কোনো দিন না খেয়েও থেকেছি। পেছনের কষ্ট সব ভুলে গেছি, যখন শুনেছি ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। আশা করি ও যেন ভর্তি হয়ে ভালো একজন ডাক্তার হতে পারে এবং মানুষের সেবা করতে পারে।
রাজিবের মা মেরুনা বেগম বলেন, রাজিব যখন ছোট তখন ওকে স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে যায়। স্কুলের একজন শিক্ষক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ছেলে বড় হয়ে কী হবে। জোরের সঙ্গে বলেছিলাম আমার ছেলে ডাক্তার হবে। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। ছেলে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ভর্তি করাতে পারব কিনা তাই নিয়ে চিন্তায় আছি। আশা করি, সকলের প্রচেষ্টায়-ভালোবাসায় আমার ছেলে একজন মানবসেবক হয়ে ওঠবে।
এসপি