রাস্তার পাশে উন্মুক্ত লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন ইউএনও
তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে তরুণ প্রজন্মসহ সবাই ব্যস্ত ভার্চুয়াল জগতে। অনলাইন জগতে অনেকেই হচ্ছেন বিপদগামীও। ঠিক এমন সময় তাদেরকে বইমুখী করে তুলতে রাস্তার পাশে গড়ে তোলা হয়েছে ‘অগ্রযাত্রা’ নামে একটি উন্মুক্ত লাইব্রেরি।
রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই এখন থামছেন ওই লাইব্রেরির সামনে। লাইব্রেরির বুক শেলফ থেকে নিয়ে পড়ছেন তাদের পছন্দের বই। ধীরে ধীরে লাইব্রেরিমুখী হচ্ছেন পথচারী, স্থানীয় শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজন।
নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাকিল আহমেদের এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগকে ইতিবাচক বলছেন স্থানীয় সচেতন মহল। ইউএনও তার নিজস্ব পরিকল্পনায় উন্মুক্ত লাইব্রেরিটি বাস্তবায়ন করায় দারুণ খুশি স্থানীয় সব শ্রেণি-পেশার লোকজন।
সরজমিনে দেখা গেছে, মাসখানেক আগে আটপাড়া উপজেলা পরিষদ এলাকায় ইউএনওর বাসভবন সংলগ্ন শহরের প্রধান সড়কের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘অগ্রযাত্রা’ নামে চমৎকার উন্মুক্ত এ লাইব্রেরি। লাইব্রেরিটি সব সময় খোলা থাকে। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত লোকজন যাতায়াত করেন। মন চাইলেই পথচারী কেউ কেউ লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে চোখ রাখেন পাতায় পাতায়। এছাড়া পাশেই রয়েছে বানিয়াজান পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং বানিয়াজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই দুটি বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। শিক্ষার্থীরা যাতায়াতের পথে লাইব্রেরিটিতে গিয়ে বই নিয়ে পড়ে। বিশেষ করে বিকেল বেলা একটু ঘুরতে বাসা বাড়ি থেকে বের হয়ে তারা ওই লাইব্রেরিতে গিয়ে ভিড় করে। বই পড়ে সময় কাটায়।
উপজেলা শহরের বাসিন্দা বানিয়াজান পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলে, লাইব্রেরিটি হওয়ায় আমরা খুব খুশি। এখানে ভালো ভালো বই রয়েছে। আমি প্রায় সময়ই বিকেল বেলা এ লাইব্রেরিতে এসে বই পড়ি। খুব ভালো লাগে। অনেক কিছুই শিখতে পারি বই পড়ে।
আটপাড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আসাদুজ্জামান খান সোহাগ বলেন, ব্যতিক্রম একটি কাজ করেছেন আমাদের ইউএনও। মহৎ একটি কাজ এটি। এমন কাজে সমাজের সচেতন লোকজনকে বেশি বেশি এগিয়ে আসা উচিত। যত বেশি বেশি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা হবে, মানুষ তত বেশি বইমুখী হবে। এতে সমাজ অনেক সুন্দর হবে। আমাদের ইউএনও খুবই স্মার্ট একজন মানুষ। খুব ভালো মনের মানুষ। তিনি আমাদের উপজেলাকে স্মার্ট ও মডেল একটি উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন। এমন একজন ইউএনও পেয়ে আমরা আটপাড়াবাসী সত্যি আনন্দিত।
এ নিয়ে কথা হলে ইউএনও মো. শাকিল আহমেদ বলেন, তথ্য প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার এই সময়ে মানুষ ধীরে ধীরে যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই ভার্চুয়াল জগতে ঝুঁকে পড়ছে। কেউ এখন আর আগের মতো বই পড়ে না। সবাই কেমন বইবিমুখ হয়ে পড়ছে। অথচ বই হল জ্ঞানার্জনের ভাণ্ডার। তাই মানুষকে কিছুটা হলেও যাতে করে বইমুখী করা যায়, মূলত সেই লক্ষ্যেই কিছুসংখ্যক বই দিয়ে রাস্তার পাশে উন্মুক্ত জায়গায় ‘অগ্রযাত্রা’ নামে লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি আরও বলেন, এতে যদি মাঝে মধ্যে কিছু বই মিসিংও হয়ে যায় তাতে আমার আপত্তি নেই। এখান থেকে বই নিয়ে যদি কেউ ফেরত না দেয় তাতে সমস্যা নেই। বরং বই যেই নেবে কোথাও না কোথাও নিয়ে রাখবে এবং সেখানেও কেউ না কেউ তা পড়বে। বড় কথা হলো এ লাইব্রেরি থেকে পথচারীসহ যে কেউ তার ইচ্ছেমতো পছন্দের বইটি নিয়ে পড়তে পারছে।
দিন দিনই পাঠকের সংখ্যা বাড়তে থাকায় উদ্যোগটি সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন ইউএনও।
জিয়াউর রহমান/আরকে