বৃষ্টিতে ধসে গেছে গাজীপুর সাফারি পার্কের দেয়াল, কোর সাফারি বন্ধ
সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিতে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কোর সাফারির কিছু অংশের দেয়াল ধসে পড়ায় বন্ধ রয়েছে পার্কের মূল আকর্ষণ কোর সাফারির কার্যক্রম। মূল আকর্ষণ বন্ধ থাকায় অনেকটা হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। কোর সাফারি ছাড়া পার্কের বাকি অংশ চালু রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমীন আক্তার। তবে কবে নাগাদ কোর সাফারির অংশ চালু হতে পারে তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। কোর সাফারি অংশ বন্ধ থাকলেও পার্কের অন্যান্য অংশ চালু রয়েছে।
তিনি জানান, গত ৫ অক্টোবর সারাদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। ওই রাতের ঝড় ও বৃষ্টিতে কোর সাফারিতে থাকা হিংস্র প্রাণীদের যে বেষ্টনী (ইটের দেয়াল) ছিল এর কয়েক জায়গা ধসে পড়ে। এ অবস্থায় বেষ্টনীতে দর্শনার্থীদের জন্য প্রাণী ছেড়ে দিলে লোকালয়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরদিন অর্থাৎ ৬ অক্টোবর থেকে সাফারি পার্কের কোর সাফারি অংশ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভেতরের বেষ্টনীগুলো সংস্কারের কাজ চলছে, সংষ্কার কাজ শেষে কোর সাফারি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তবে কবে নাগাদ চালু হতে পারে তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তবে কোর সাফারি ছাড়া পার্কের অন্যান্য অংশ চালু রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কোর সাফারিতে জিরাফ, জেব্রা, বাঘ, সিংহ, ভাল্লুকসহ নানা দেশি-বিদেশি প্রাণী উন্মুক্ত ও প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণরত থাকে। পার্কের কাঁচ ঘেরা সাফারি গাড়ি ব্যতীত কোনো দর্শনার্থী কোর সাফারিতে প্রবেশ করতে পারেন না। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের মূল আকর্ষণ কোর সাফারি দুর্গাপূজার ছুটিতে বন্ধ থাকায় পার্কে আসা দর্শনার্থীরা ক্ষোভ ঝাড়ছেন।
ময়মনসিংহের মাসকান্দা এলাকা থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সাফারি পার্কে ঘুরতে এসেছিলেন প্লাবন চন্দ্র সরকার। একটি বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, স্ত্রী-সন্তান প্রায়ই বায়না ধরে সাফারি পার্কে ঘোরার। সারা বছর চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় বলে সময় হয়ে উঠে না। দুর্গাপূজার ছুটি কাজে লাগিয়ে সন্তানকে বাঘ, হিংস, ভাল্লুক দেখাতে ওর আশা পূরণ করতে এসেছিলাম সাফারি পার্কে। কিন্তু পার্কের কোর সাফারির বন্ধের নোটিশ টাঙানো দেখতে পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।
একই কথা জানিয়েছেন নরসিংদী থেকে আসা শফিকুল ইসলাম অয়ন। তিনি বলেন, ব্যস্ততার কারণে স্বজনদের নিয়ে ঘোরার সময় হয়ে না উঠায় সাফারি পার্কে কখনও আসা হয়নি। দুর্গাপূজার দীর্ঘ ছুটি পেয়ে এবার এসেছিলাম পার্কে। কিন্তু বাঘ, সিংহসহ আকর্ষণীয় বিদেশি প্রাণীগুলো দেখতে পাইনি। বাকি পাখি ও প্রাণীগুলো দেখেছি। তবে কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে কোর সাফারি পার্ক চালু করার।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগে ভারী বৃষ্টির কারণে কোর সাফারি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বৃষ্টির ঘনত্ব বেড়েছে। অল্প সময়ের বৃষ্টিতে অধিক পরিমাণের পানি হচ্ছে। এক টানা দুইদিন হলে যে পানি হতো এখন এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সেই পানি হচ্ছে। আগে বৃষ্টিতে এতো পানি হতো না। সেই কারণে পানির তীব্রতায় পানি যেদিক দিয়ে নেমেছে সেই দিকের সম্পূর্ণ ওয়াল ধসে গেছে। যে জায়গায় পানির প্রবাহ ছিল ওয়ালে আটকে পানির উচ্চতা ৭ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত হয়েছিল। প্রাণীগুলো ভেসে লোকালয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। গাছ দিয়ে কোনো মতে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। এতে বাঘ, সিংহ, হরিণ ও হাতির বেষ্টনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণীগুলোর যাতে কোনা ক্ষতি না হয় ওরা যাতে লোকালয়ে যেতে না পারে আমাদের পার্কের স্টাফরা সারারাত জেগে থেকে দাঁড়িয়ে থেকে পাহারা দিয়েছে। বাঘ সিংহের বেষ্টনী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে তাৎক্ষণিকভাবে কোর সাফারি পার্ক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই মহূর্তে ওয়াল করার জন্য প্রস্তুতি না থাকায় জরুরী ভিত্তিতে যা করার আমরা করছি, যাতে করে কোর সাফারি চালু করা যায়। আমরা আশা করছি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কোর সাফারি চালু করা যাবে। আমার বাঘ, সিংহ ও ভাল্লুকগুলোকে নিরাপদ অবস্থায় রেখে তৃণভোজী প্রাণীকে গাছের ব্যারিয়ার দিয়ে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে চালু করতে পারবো।
শিহাব খান/এমএএস