১৫ বার চেষ্টার পর লিমনের অচিন পাখি উড়ল আকাশে
ছোটবেলায় ঢাকার উত্তরার একটি মাদরাসায় পড়াকালীন কাছ থেকে বিমান দেখার সুযোগ হয়েছিল গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের যুবক ইয়াছিন শেখ লিমনের। তখন থেকেই ইচ্ছা জাগে বিমান বানানোর। সেই ইচ্ছা থেকে ১৫ বার বিমান বানানোর চেষ্টাও করেছেন লিমন। বার বার ব্যর্থ হয়ে ১৬তম বার এসে সফল হয়েছেন তিনি। অবশেষে নিজের বানানো বিমান আকাশে উড়িয়েছেন লিমন।
আর এ বিমান তৈরিতে লিমনকে কখনও ঋণ করে, কখনও আবার ওয়ার্কশপে কাজ করে যোগাতে হয়েছে সরঞ্জামাদির টাকা। লিমনের তৈরি এই বিমান দেখতে তার বাড়িতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। কেউবা আবার বিমান বানানোর জন্য পরামর্শ নিচ্ছেন লিমনের কাছ থেকে।
লিমন উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের ভ্যানচালক আবু বক্কার শেখের ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে লিমন সবার ছোট। পঞ্চম শ্রেণি পাস করা লিমন বর্তমানে স্থানীয় বাজারের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করেন। ছোটবেলা থেকেই লিমনের আবিষ্কারের প্রতি প্রচুর আগ্রহ ছিল। তাই তো কাছ থেকে বিমান দেখে তৈরির চিন্তা মাথায় আসে লিমনের। এর আগে তিনি ফেরি, যাত্রীবাহী বাস, স্টিমার বানিয়েছেন। এরপর বিমান তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি।
কোনো ধরনের একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াই ইউটিউব দেখে ও কয়েকজন মানুষের পরামর্শে তৈরি করেছেন বিমানটি। এ বিমান তৈরিতে লিমনের খরচ হয়েছে প্রায় বিশ হাজার টাকা। লিমনের আয়ের টাকা ছাড়াও বিমান তৈরির টাকা যোগাড় করতে পরিবারকে ঋণ নিতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। লিমনকে শুনতে হয়েছে পরিবারের কাছ থেকে গালমন্দ। তারপরও দমে যাননি লিমন। বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আদলে তৈরি করা ওই বিমানের নাম দিয়েছেন অচিন পাখি। যার কোচ নাম্বার দিয়েছে ৭৮৯।
এ বিষয়ে লিমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোটবেলায় মাদরাসায় পড়ার সময় কাছ থেকে বিমান উড়তে দেখতাম। তখনই ভেবেছিলাম বড় হয়ে বিমান বানাবো। এর আগেও আমি ফেরি, বাস, স্টিমার বানিয়েছি। পরে চিন্তা করলাম একটি বিমান বানাই। এই বিমানটি বানাতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় বিশ হাজার টাকা। ইউটিউব দেখে ও রংপুরের এক ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। আর তার কাছ থেকেই বিমানের সকল সরঞ্জামাদি কিনেছি। তিনি আমাকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়েছেন।
লিমনের বড় ভাই সুমন শেখ বলেন, আমার ছোট ভাই সারাদিন আমার সঙ্গে ওয়ার্কশপে কাজ করে রাতে বাড়ি এসে না ঘুমিয়ে বিমান তৈরি করতো। অনেক গালমন্দ করেছি কিন্তু লিমন শুনতো না। বিমানটি আকাশে উড়ানোর পর এখন আমাদের সকলেরই ভালো লাগছে। লিমনের কাছে অনেকেই এখন বিমান তৈরির জন্য পরামর্শ নিতে আসে।
লিমনের বাবা আবু বক্কার শেখ বলেন, আমার ছেলে এইটা বানাতে গিয়ে আমাকে বেশ কয়েকবার ঋণগ্রস্ত করেছে। অনেক গালমন্দ করেছি কিন্তু লিমন শুনতো না। সারারাত ধরে না ঘুমিয়ে জেগে জেগে বিমান তৈরি করতো। সব কষ্ট এখন আমার শেষ হয়ে গেছে, আমার ছেলের তৈরি বিমান আকাশে উড়ানোর পর।
লিমনের প্রতিবেশী শফিকুল বলেন, লিমন ভাইয়ের বিমান আকাশে উড়ানোর পর আমিও উদ্ভুদ্ধ হয়ে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছি কীভাবে বিমান বানানো যায়। আমিও লিমন ভাইয়ের মতো একটি বিমান তৈরি করে আকাশে উড়াবো।
আশিক জামান/এমএএস