প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে মুন্নীকে ডাকলেন ডিসি
দারিদ্র্য জয় করে মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া পাবনার সুজানগরের জান্নাতুম মৌমিতা মুন্নী পড়ালেখার সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল) দুপুরে মুন্নী ও তার বাবাকে ডেকে নেন পাবনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) কবীর মাহমুদ। দুপুর দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মুন্নীকে নিয়ে আসেন বাবা বাকীবিল্লাহ।
এ সময় জেলা প্রশাসক মুন্নী ও তার বাবাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে মুন্নীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেন ডিসি। একই সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে মুন্নীর বাবার ভ্যান কেনার ঋণ পরিশোধের জন্য ২০ হাজার টাকা দেন তিনি। পাশাপাশি মুন্নীর বাবাকে একটি সরকারি ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ডিসি।
এরই মধ্যে মুন্নীর পড়ালেখার সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ এবং দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম। সকালে তিনি মুন্নী ও তার বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন। এমবিবিএস পাস করা পর্যন্ত মুন্নীর যাবতীয় শিক্ষাব্যয় বহনের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
সুজানগর উপজেলার তাঁতীবন্দ ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের ভ্যানচালক বাকীবিল্লাহ ও রওশন আরা খাতুনের মেয়ে মুন্নী। চার সন্তানের মধ্যে মুন্নী বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মুন্নীর বাবা ভ্যানচালক। মুন্নীর বাবার নিজ বাড়ির দুই কাঠা জায়গা ছাড়া কিছুই নেই। বাড়িতে রয়েছে ছোট টিনের ঘর। সেই ঘরেই থাকেন পরিবারের সবাই। পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়।মেডিকেলে ভর্তি ও পড়ার খরচ জোগানোর সামর্থ্য নেই মুন্নীর বাবার।
মুন্নীর বাবা বাকীবিল্লাহ বলেন, ব্র্যাকের স্থানীয় শাখা থেকে ২০ হাজার টাকা লোন নিয়ে একটি ভ্যান কিনি। সেই ভ্যান চালিয়ে দিনে যে দুই-তিনশত টাকা আয় হয়। তা দিয়ে কোনোরকম পরিবারের ছয় সদস্যের মুখের খাবার তুলে দেওয়াসহ সংসারের খরচ চালাতে হয়। যেখানে সংসার চালানো দায়, সেখানে মেয়ের মেডিকেলে লেখাপড়ার খরচ চালানো দুঃস্বপ্ন। তবে স্বপ্ন দেখি মেয়ে ডাক্তার হবে। মেয়ে এখন স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মেয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে; এটি আমার জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
মুন্নীর মা রওশন আরা খাতুন বলেন, প্রতিবেশীরা বহু বার বলেছে- মেয়েকে পড়িয়ে কোনো লাভ নেই, বিয়ে দিয়ে দাও। শতবার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। আমরা রাজি হইনি। শুধু বলেছি, মেয়ে ডাক্তার হবে। মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এটি বড় খুশির খবর।
মুন্নী ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। পোড়াডাঙ্গা হাজী এজেম আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন মুন্নী। ছোট থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। স্বপ্নপূরণের জন্য অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়ার পেছনে ব্যয় করেছেন।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৩১১০তম হয়ে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান মুন্নী। তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৬৯.৭৫ নম্বর পান।
মুন্নী বলেন, স্কুল-কলেজে পড়াশোনার সময় অর্থের অভাবে একসঙ্গে প্রয়োজনীয় সব বই কিনতে পারতাম না। একটা একটা করে বই কিনতাম। মন চাইলে একটা ভালো পোশাক কিনতে পারতাম না। কারণ জন্ম গরিবের ঘরে। মা-বাবা খুশি হয়ে যা কিনে দিতেন, তাতেই খুশি থাকতাম। স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করা অবস্থায় বিভিন্ন দিক দিয়ে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় নাছির স্যার। এজন্য স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা। স্কুল-কলেজের সব শিক্ষকই আমাকে ফ্রি প্রাইভেট পড়িয়েছেন। চিকিৎসক হয়ে অসহায় ও চিকিৎসাবঞ্চিতদের সেবা করব।
তাতিবন্ধ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মৃধা বলেন, মুন্নী মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পরই ভর্তির সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলাম। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম সহায়তার জন্য। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমার ইউনিয়নকে আলোকিত করেছেন মুন্নী। আমি তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করব। যতদিন মুন্নী মেডিকেল পড়বে, ডাক্তার না হওয়া পর্যন্ত সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতার জন্য তার কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মুন্নীর সমস্ত কাগজপত্র পাঠিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে লোন পরিশোধের জন্য মুন্নীর বাবাকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সহযোগিতা এলে মুন্নীর পরিবারে পৌঁছে দেওয়া হবে। শুধু মুন্নী নন, যেকোনো হতদরিদ্র মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দরজা সবসময় খোলা।
রাকিব হাসনাত/এএম