বাবা মায়ের চিকিৎসার জন্য রিকশা চালান সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া আমিনুল
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে অসুস্থ বাবা-মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে রিকশা চালান সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া আমিনুল ইসলাম। যে বয়সে পড়াশোনার পাশাপাশি মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সেই বাবা-মায়ের চিকিৎসা ও সংসারে হাল ধরতে রিকশা চালাচ্ছে সে।
কুড়িগ্রামের শিমুলবাড়ি ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র আমিনুল ইসলাম। তার বাড়ি ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নে চন্দ্রখানা গ্রামের কুড়ারপাড় এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র চার শতক জমির ওপর জরাজীর্ণ একটি বাড়িতে থাকে আমিনুলের পরিবার। আমিনুল ইসলামের বাবা আব্দুল করিম মিয়ার (৫৩) প্রায় ১ বছর আগে স্ট্রোক করে হাত পা অবশ হয়ে গেছে। ভালো করে কথাও বলতে পারেন না। কোনোভাবে লাঠির ওপর ভর দিয়ে চলাফেরা করেন।
এদিকে মা কবিজন বেগম (৪৫) প্রায় ৭-৮ বছর থেকে টিউমার রোগে আক্রান্ত। টাকার অভাবেই চিকিৎসা করতে পারছেন না স্বামী-স্ত্রী। অসুস্থ বাবা-মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে তাই রিকশা চালাচ্ছে আমিনুল। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে বাবা-মায়ের ওষুধ ও সংসারের খরচের জোগান দিচ্ছে সে।
স্থানীয় জহুর আলী জানান, পরিবারটি খুব অসহায় অনেক কষ্ট করে চলে। সংসারে আয় উপার্জন করার কোনো ব্যক্তি না থাকায় ছোট্ট আমিনুল রিকশা চালিয়ে পরিবারটি চালাচ্ছে ও তার বাবা-মায়ের চিকিৎসা করেছে। তবে সরকার ও দানশীল ব্যক্তি এগিয়ে আসলে পরিবারটির জন্য খুব ভালো হতো।
আমিনুলের মা কবিজন বেগম জানান, আমরা স্বামী-স্ত্রী খুবই অসুস্থ ও অসহায়। আমার এক ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় থাকে। ছোট্ট ছেলে আমিনুল লেখাপড়ার পাশাপাশি রিকশা চালিয়ে আমাদের চিকিৎসার খরচ চালায়। সরকারি কোনো সহযোগিতায় চিকিৎসা করাতে পারলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারতাম।
আমিনুল ইসলাম বলেন, বাড়িতে খুব অভাব, মা-বাবা অনেক অসুস্থ তাই বাধ্য হয়ে বাবা মায়ের চিকিৎসা ও লেখাপড়ার পাশাপাশি রিকশা চালাই।
ফুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুন অর-রশিদ হারুন বলেন, আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি পরিবারটি খুবই অসহায়, বাবা মায়ের চিকিৎসার জন্য আমিনুল লেখাপড়া বাদ দিয়েই রিকশা চালাচ্ছে। তাদেরকে সাহায্যের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রায়হানুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন দিলে সমাজসেবা অধিদপ্তর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেবে।
মো. জুয়েল রানা/এএএ