এমপি নিক্সনের লাগানো তালা ভেঙে দলীয় কার্যালয়ে কাজী জাফরউল্লাহ
ফরিদপুরের সদরপুরে অবস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের লাগানো তালা ভেঙে ফেলেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ও তার সমর্থকেরা।
শনিবার (৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দলীয় কার্যালয়ের ফটকে লাগানো তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষ্যে বর্ধিত সভা করেন কাজী জাফরউল্লাহ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় কাজী জাফর উল্লাহর সমর্থকেরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির পাশে থাকা ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এবং যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের ছবি নামিয়ে সেখানে কাজী জাফরউল্লাহর ছবি টানিয়ে দেন।
আগামী ১০ অক্টোবর ভাঙ্গায় কাজী ইউসুফ স্টেডিয়াম মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ উদ্বোধন করতে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে একটি ট্রেনে করে ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে আসবেন।
বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আলম রেজা। বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, আমি সদরপুরে আওয়ামী লীগের জন্য এত সুন্দর একটি অফিস করে দিয়েছিলাম। নিজস্ব অফিস, নিজস্ব দালান গর্বের ব্যাপার। অথচ একটি ডাকাতের দল বিএনপি ও জামায়াতের লোকজনদের নিয়ে অফিস দখল করে রেখেছিল। আগামী ১০ অক্টোবর ভাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় লোকজনকে সকালেই মাঠে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় অন্যদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকারী সদস্য মো. আনিছুর রহমান, ঢেউখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহামান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মশিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর কাছে সদরপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় স্থাপনের দাবি জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এ প্রেক্ষিতে সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সদরপুর স্টেডিয়াম মাঠের পূর্বপাশে আনুমানিক চার শতাংশ সরকারি খাস জমিতে দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের এ কার্যালয়টি স্থাপন করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের শেষের দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের সঙ্গে যোগ দেন। যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরেই উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ওই কার্যালয়টি নিক্সনপন্থীরা দখল করে নেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক আবু আলম রেজা বলেন, দলীয় ওই কার্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে নিক্সনপন্থীরা তালাবদ্ধ করে রেখেছিল। এ কারণে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে কার্যালয়টি খুলে দিতে বলি। প্রথমে আমরা জানতাম কার্যলয়ের তালার চাবিটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমানের কাছে আছে। তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাবি তার কাছে নেই। পরে আমরা তালা ভেঙে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে সভা করি। কার্যালয় থেকে নিক্সন চৌধুরীর ছবি সরিয়ে কাজী জাফরউল্লাহর ছবি স্থাপন করা হয়েছে।
এমপি নিক্সন সমর্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় নিয়ে আগে সমস্যা ছিল, কিন্তু এখন নেই। ওরা (কাজী জাফরউল্লাহপন্থীরা) দীর্ঘদিন ওই অফিসে তালা মেরে রেখেছিল। এতো দিন ব্যবহার করেনি, কোনো সভা করেনি। আজ তালা খুলে সভা করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। এরপর এই আসনের অন্তর্ভুক্ত তিন উপজেলায় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলেও ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটে।
জহির হোসেন/আরএআর