সাতক্ষীরায় তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল। এতে সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি ও তালা উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বসতবাড়ি, আবাদি জমি ও ঘেরসহ রাস্তাঘাট পানিবন্দি থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ। জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোর মধ্যে বেশ কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য পানি সরবরাহের পাইপগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা।
তালা উপজেলা সদরের মাঝিয়াড়া খড়েরডাঙ্গা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এই জনপদের পানি খড়েরডাঙ্গা থেকে কপোতাক্ষ নদ হয়ে নিষ্কাশিত হয়। তবে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা থাকায় খাল দিয়ে নিষ্কাশিত হচ্ছে না পানি। কপোতাক্ষ নদের সংযোগ খালে পানি নেই অথচ জনবসতি এলাকায় হাঁটু পানি। একই উপজেলার খলিলনগর, খলিশখালি ইউনিয়নসহ অনেক গ্রামের চিত্র একই।
মাঝিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ খালিদ জানান, জনপদের পানি খাল দিয়ে অপসারণ হয়। তবে খড়েরডাঙ্গা বিলে থাকা বেঁড়িবাধ পানি প্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আটকে থাকা পানিতে ভাসছে হাজারো মানুষ।
একই এলাকার আমেনা বেগম বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের ফলে উঠানে হাঁটু পানি জমে গেছে। গবাদি পশু রাখার জায়গা নেই। ক্ষেতের ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে এতো পানি দেখিনি।
তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সনৎ কুমার বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে উপজেলার অনেকগুলো গ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে নিজে গিয়ে কয়েকটা বাঁধ কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া আগামীকাল সরেজমিন গিয়ে পানিবন্দি এলাকাগুলো পরিদর্শন করবো, একই সঙ্গে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া শারমিনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, সাতক্ষীরা পৌরসভার কামালনগর দক্ষিণপাড়া, পলাশপোল, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, কাটিয়া মাঠপাড়া, রথখোলা, মুনজিতপুর, মাছখোলাসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর এলাকার ইয়াসিন ইসলাম জানান, সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই শহরের অর্ধেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। কত কয়েকদিনের বর্ষণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শহরের পার্শ্ববর্তী অনেকগুলো এলাকা। এতে এলাকার স্কুল শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। তাছাড়া অনেকদিন ধরে এসব এলাকায় পানি জমে থাকায় পানিবাহিত নানা ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিম্নাঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের ড্রেন কালভার্ট যথাযথ নজরদারি না রাখার কারণে এ সমস্যা বারবার সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বেতনা নদী পূর্ণ খননের কার্যক্রম দ্রুত শেষ না হলে বছরে ছয় মাস পানিতে ডুবে থাকতে হবে নীচু এলাকার মানুষদের।
আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের দাস পাড়ার ৩৫০টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে গত তিন মাস যাবৎ। এখানকার অনেকেই বসতবাড়ি রেখে অন্যত্র চলে গেছেন আবার কেউ বা গাছের নিচে কিংবা রাস্তার পাশে বসবাস করছেন।
বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক জানান, পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করেও সুফল মিলছে না। স্যালো মেশিন লাগিয়ে পানি কমানোর চেষ্টা করেছি তবে বৃষ্টি আসলে আবার ডুবে যাচ্ছে। পাশে বেতনা নদীর খননকাজ চলছে ফলে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী জানান, উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মানুষ কমবেশি পানিবন্দি। খালে নেটপাটা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে এক শ্রেণির ঘের ব্যবসায়ী। বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা একটা বড় সমস্যা। জলাবদ্ধতা দূর করতে নদী ও খাল খনন প্রকল্প চলমান রয়েছে। খননকাজ শেষ হওয়ার পর জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে সাতক্ষীরার মানুষ। তবে খালে অবৈধ নেট পাটা দিয়ে অনেকে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে সেগুলো উচ্ছেদে অভিযান চলছে। মাছের ঘেরের বেড়িবাধ কিছু কিছু এলাকায় পানি প্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। সেই বাধাগুলোও দূর করে জনপদ থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।
সোহাগ হোসেন/এএএ