করোনা ঝুঁকিতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর হাজারো নারী-শিশু
করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার সারাদেশে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করলেও দেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় নেই কোনো বিধিনিষেধ। এখানে অবাধে যাতায়াত করছে শত শত মানুষ। ফলে সংক্রমণ ঝুঁকিতে রয়েছে এই পল্লীতে বসবাস করা কয়েক হাজার নারী-শিশু।
জানা গেছে, এখানে কঠোর বিধি নিষেধের কোনো প্রভাব পড়েনি। প্রতিদিনই খদ্দের আসছেন। পেশাগত কারণে তাদের সময়ও দিচ্ছেন যৌনকর্মীরা। তবে গত বছর দীর্ঘদিন এই যৌনপল্লীটি লকডাউনের আওতায় ছিল এবং এখানে সরকারি অনুদানের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও ও পুলিশের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতাসহ খাবার বিতরণ করা হয়। কিন্তু এবার চিত্র পুরোটাই ভিন্ন।
সরকারি হিসাব মতে, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে ১ হাজার ৬০০ যৌনকর্মীর বসবাস। তবে বিভিন্ন এনজিও এ সংখ্যাকে ৫ হাজারের বেশি দাবি করে আসছে। এখন যেহারে করোনায় আক্রান্ত মানুষ বাড়ছে তাতে যৌনপল্লীর এমন ঘিঞ্জি পরিবেশে মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে।
পল্লীর খদ্দেরদের কে কোথা থেকে এসেছেন, তাদের শারীরিক অবস্থা কেমন তা জানার কোনো উপায় নেই। কারণ পল্লীর অনেক বাসিন্দা এ বিষয়ে এখনো অসচেতন। ফলে একবার সংক্রমণ ছড়ালে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
যৌনকর্মীরা জানান, আমরা পেটের দায়ে এখানে রয়েছি। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে খদ্দের আসা-যাওয়া করেন। পেশাগত কারণে তাদের ঘরে নিতে হয়, না বলার সুযোগ নেই। কিন্তু এদের মধ্যে কে করোনায় আক্রান্ত কে সুস্থ তা শনাক্তের কোনো উপায় পল্লীতে নেই। এজন্য আতঙ্কে আছি। কিন্তু কাজ না করলে যে পেটেও ভাত যাবে না।
তারা আরও বলেন, গত বছর করোনায় পল্লী বন্ধ ছিল। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত পল্লীর স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে, লোকজন যদিও একটু কম আসে। এতো ঘিঞ্জি পরিবেশে স্বাস্থ্য বিধি মানা সম্ভব নয়। তবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে কিছু সাবধানতা অবলম্বনের চেষ্টা করছি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা আসেনি। এজন্য আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। তবে সরকারি কোনো সহায়তা এলে তাদের দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২০২০ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২০ দিনের জন্য দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লী গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পতিতালয় বন্ধ করে দেয় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। ওই সময় সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু গত ৫ এপ্রিল থেকে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হলেও পতিতাপল্লী বন্ধ করা হয়নি।
মীর সামসুজ্জামান/এসপি