আমি বাঁচতে চাই
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আশায় ১১ মাস ধরে হাসপাতালে কোরবান আলী। দিনের পর দিন চিকিৎসার খরচ দিয়ে ফুরিয়েছে সহায়-সম্বল। এখন অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা করতে না পারায় অসহায় পরিবার। কিডনি সমস্যাজনিত রোগে আক্রান্ত ছেলের এমন দশা দেখে প্রতিদিন চোখের পানি ফেলছেন অসহায় মা-বাবা। বিত্তবানদের কাছে অসুস্থ ছেলেকে বাঁচানোর আকুতি তাদের।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের ওসমানপুর বনচুকিপাড়া গ্রামের কৃষক আবু তাহের ও মঞ্জুয়ারার তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট কোরবান আলী। ২১ বছরের কোরবান আলী ২০১৮ সালে লালবাড়ি কচুবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।
এ বছর দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পড়ালেখার পাশাপাশি ফুটবল খেলায় বেশ পারদর্শী হওয়ায় এলাকায় তার অন্যরকম পরিচিতি।
পড়ালেখা ও খেলাধুলায় সবার মনজয় করা কোরবান আলী এখন মাঠে খেলতে পারেন না। সঙ্গীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুটবল নিয়ে দৌঁড়াতেও পারেন না। সদা হাস্যোজ্জ্বল কোরবানের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। সারাক্ষণ চেয়ে থাকেন মা-বাবার মুখের দিকে। দুটি কিডনি তার নষ্টের পথে। অর্থের অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার। সবকিছু বুঝতে পারায় নির্বাক হয়ে মাসের পর মাস বসে শুয়ে দিন কাটাচ্ছেন কোরবান।
কৃষিকাজ করে সংসার চালানো আবু তাহের ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন সম্বলহীন। সংসারে যা ছিল, একটু একটু করে সবই ফুরিয়ে গেছে। তবু হাল ছাড়েননি। আছেন ছেলের পাশে।
ঢাকা পোস্টকে আবু তাহের বলেন, ২০২০ সালের মে মাসে হঠাৎ করে কোরবান অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। চিকিৎসকের পরামর্শে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা শেষে কোরবানের কিডনিজনিত রোগ ধরা পড়ে। দুটো কিডনি অকেজো হওয়ার পথে। সেই থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোরবানের চিকিৎসা চলছে।
আবু তাহের আরও বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য ছেলেকে দেশের বাইরে নিতে বলেছেন চিকিৎসক। কিন্তু আমার সামর্থ্য নেই। ১১ মাস ধরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। যা সম্বল ছিল; ছেলের জন্য বিক্রি করেছি। এখন আমার যা অবস্থা তাতো দেশেই চিকিৎসা করাতে পারব কিনা জানি না। সবার সহযোগিতা ছাড়া ছেলের উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব না।
কোরবানের মা মঞ্জুয়ারা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোরবানের কোনো উন্নতি হয়নি। চিসিৎসকদের পরামর্শ; ছেলেকে বাঁচাতে চাইলে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। এজন্য বিদেশে নিতে হবে। কিন্ত আমাদের যা ছিল, সবই শেষ। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া উপায় নেই।
অসুস্থ কোরবান আলী বলেন, আমরা দুই ভাই ও এক বোন। বড় ভাই করোনার সময়ে চাকরি হারিয়ে বাড়িতে চলে এসেছেন। বোনের বিয়ে হয়েছে। আমি পরিবারে সবার ছোট। আমাকে নিয়ে মা-বাবার অনেক স্বপ্ন। গরিব হলেও স্বপ্ন দেখতাম; পড়ালেখা করে উচ্চ শিক্ষিত হব। দেশ ও দশের জন্য কিছু করব। কিন্তু আজ আমার স্বপ্ন নিভে যাচ্ছে। আমি বাঁচতে চাই।
চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আকুতি জানিয়ে কোরবান আলী বলেন, আমার মা-বাবা শুধু কাঁদে। আমি জানি আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আজ তারা নিঃস্ব। আমি সবার সহযোগিতা চাই। সবাই এগিয়ে এলে আমি বাঁচতে পারব।
হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম মোবাশ্বের আলম বলেন, অসুস্থ কোরবানের দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালাইসিস করানো হচ্ছে। পাশাপাশি তার থেরাপি চলছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন।
কোরবান আলীর চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করতে চাইলে (০১৭৩৪-২৩৯-১৭৭) নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। আর্থিক সহায়তা করতে পারেন আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের রংপুর বদরগঞ্জ শাখার (হিসাব নম্বর- ০৬৭১১২০১৬৬০৬৭) নম্বরে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএম