‘কৃষক ঋণের টাকা ফেরত দেয়, পিকে হালদাররা দেয় না’
দুর্নীতি আর অর্থ পাচার বাংলাদেশ পিছিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
সম্প্রতি ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলতে এসে ঢাকা পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যে কোনো আদর্শ কিংবা সোনার বাংলার কথা বলা হোক না কেন, কোনো কিছুতেই সফল হওয়া যাবে না যদি দুর্নীতি এভাবে বাড়তে থাকে। এ কারণেই আমি ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে দুর্নীতির প্রতিবাদ করছি। সোশ্যাল মিডিয়া এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, কারণ আমাদের একটি বড় অংশ আছে তরুণ সমাজ।
হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, বাংলাদেশকে সাজাবেন কীভাবে যদি আপনার কাছে টাকা না থাকে। আর টাকা থাকবে কীভাবে, সব তো সব পাচার হয়ে যাচ্ছে। ডলারের দাম বাড়ছে কারণ ডলার তো নেই দেশে, ডলার পাচার হয়ে গেছে। জিনিসের দাম বাড়ছে কারণ আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে অতিরিক্ত দাম দিয়ে।
আরও পড়ুন : ফুটবল ফেডারেশনকে পুনরুজ্জীবিত করে ছাড়ব : ব্যারিস্টার সুমন
তিনি বলেন, একটা রিপোর্টে দেখলাম কৃষকেরা ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন, আর তারা ২৭ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছেন। আর পিকে হালদারসহ রাঘব বোয়ালরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে পাচার করেছে। এমন হয়েছে গেছে যে, ১০০ টাকা চুরির জন্য চোর পিটানো হয় আর এক হাজার কোটি যারা চুরি করে তাদের স্যার ডাকা হচ্ছে। আমরা সবাই, সংবাদপত্র থেকে শুরু করে, অ্যাডভোকেট থেকে শুরু করে যারা আছে সবাই তাদের পারপাস সার্ভ করছি। দেখা যায়, দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে একটা মামলা নিয়ে গেলে বড় বড় আইনজীবীরা দাঁড়িয়ে যায় তার পক্ষে। এ নিয়ে কিছু হতাশা তো কাজ করেই।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, যে বিষয়গুলো নিয়ে আমি প্রতিবাদ করতাম এগুলো নিয়ে হাইকোর্টে কথা বলতাম। কথা বলতে গিয়ে আমি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলছি। আব্দুল সালাম মুর্শেদির জাল জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে বাদী হয়ে কথা বলেছি। শেরাটন হোটেলের কাছে ৬০০ কোটি টাকার সরকারের পাওনা, যা এখনো দেওয়া হয়নি; এটা নিয়ে বাদী হয়ে কথা বলেছি। সবশেষ এস আলমের বিরুদ্ধে যে একটা রিপোর্ট এসেছে, এক বিলিয়ন ডলার মানে ১১ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে, এটাও আমি উচ্চ আদালতের নজরে নিয়ে এসেছি।
আরও পড়ুন : কুমিল্লার মানুষ সব সময় ইতিহাস তৈরি করে : ব্যারিস্টার সুমন
মিডিয়াও দুর্নীতির ভেতরে, এমনটা জানিয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, অনেকে বলেন সংবাদপত্র বা মিডিয়াগুলো সব মিডিয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে দুর্নীতি অনেক নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে এখন মিডিয়াও তো দুর্নীতির ভেতরে। অনেক প্রকাশিত এবং প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতিবাজ এমডিরাও মিডিয়া কন্ট্রোল করেন অথবা মালিকও রয়েছেন। যার কারণে দেখা যাচ্ছে মিডিয়াও দুর্নীতির ব্যাপারে কথা বলতে চায় না। দেখা যায়, বড় বড় দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারে কথা বললে মিডিয়া সেই সংবাদ সামনেই নিয়ে আসে না।
তিনি বলেন, বড় বড় চ্যানেলগুলোর সাংবাদিকদের হতাশ হয়ে বলতে দেখেছি, আমরা তো অফিসে পাঠিয়েছি কিন্তু অফিস এটা প্রচার করবে না। বেশিরভাগ মিডিয়ার এমডিদের সঙ্গে ভালো একটা যোগাযোগ রয়েছে মাফিয়াদের। যে কারণে সেই সব মাফিয়াদের বিরুদ্ধে নিউজ করা যায় না। এসব দেখলে লজ্জা হয়। তবে এমনও মিডিয়া আছে যারা সাহস করে অনেক নিউজ করে ফেলে। মিডিয়াগুলো যদি এসব সামনে না নিয়ে আসে তাহলে আমরা এত তথ্য পাবো কোথায়, আমরা যে একটু প্রতিবাদ করবো সেটাও তো মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা খুঁজে পাই।
অর্থপাচার রোধ করতে সরকারকেই এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, সরকারের অনেক লোকই দেখা যায় এটার সঙ্গে জড়িত, তাহলে সরকার কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করবে। অর্থ পাচারের রোধের জন্য সরকারের যে সব বিভাগ করেছে তাদের যদি পুরো ক্ষমতা দেওয়া না হয়, তারা যদি সব জায়গায় এক্সেস নিতে না পারে তাহলে এটি পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব নয়। সেজন্য সরকারকেই ভুমিকা রাখতে হবে।
আরও পড়ুন : বৃষ্টিতে ভিজে ব্যারিস্টার সুমনের খেলা দেখল ভালুকাবাসী
দুর্নীতির বিরোধিতার পাশাপাশি ফুটবলের যুদ্ধ চালিয়ে চাওয়া প্রত্যয় ব্যক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের সঙ্গে ফুটবলের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে একটি সক্ষম তরুণ প্রজন্ম গড়ে ওঠা দেখতে চাই। মোবাইল ফোনে আসক্তি এবং মাঠ দখল হয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন আর মাঠে যায় না। অথচ আমরা সারাদিন মাঠে পড়ে থাকতাম।
ব্যারিস্টার সুমন আরও বলেন, মাঠে না গেলে এ প্রজন্ম তো ৪০ বছর বয়সেই বুড়ো হয়ে যাবে। তাদের কাছে ইন্টারনেট, কম্পিউটার-পড়া ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। মাদক আর খেলাধুলার অভাবে তরুণ প্রজন্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত চেষ্টা করে যেতে চাই। আমি একজন আইনজীবী হয়েও এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। কারণ আমার কথা, কাজে এবং আমার ফুটবল খেলায় কিছু মানুষ যদি অন্তত পরিবর্তন হয়, সেই মানুষগুলো নিয়েও তো আমরা সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারি। এইজন্যই কাজ করে যাচ্ছি আর নতুন প্রজন্মকে বলছি রাজনীতি মানে দুর্নীতি না, আর দুর্নীতি মানে রাজনীতি না। যারা রাজনীতি করবেন তারা দুর্নীতি ছাড়েন আর যারা দুর্নীতি করবেন তারা আল্লাহর ওয়াস্তে রাজনীতিটা ছেড়ে দেন। এভাবে রাজনীতিটাকে নষ্ট করবেন না। এই হচ্ছে এখন আমার চাওয়া।
উবায়দুল হক/এসএম