নোয়াখালীর শ্রেষ্ঠ ইউএনও-উপজেলা চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা
নোয়াখালীর জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হওয়ায় চাটখিল উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া ও টানা দ্বিতীয়বার নোয়াখালী জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় চাটখিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবিরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চাটখিল জেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত, সংরক্ষিত নারী আসন-৩৩ এর সংসদ সদস্য ফরিদা খানম সাকি, নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌসী বেগম, অরচার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফারুক, চাটখিল পৌরসভার মেয়র মো. নিজাম উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা শাকিল, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোজিনা আক্তার প্রমুখ।
নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় নোয়াখালী জেলার ৯টি উপজেলার চেয়ারম্যানদের মধ্যে চাটখিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবিরকে ২০২২ সালের মতো ২০২৩ সালেও শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। এছাড়াও জেলার দায়িত্বরত উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মধ্যে চাটখিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূ্ঁইয়াকে ২০২৩ সালের শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিষয়ে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি সম্পন্ন করা উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির ১৯৬৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের মলংমুড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দেশের নামকরা শিল্প প্রতিষ্ঠান একটিভ গ্রুপের কর্ণধার ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন একটিভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ২০১৪ সাল থেকে চাটখিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি ২০১৩ সাল থেকে চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
ইউএনও মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভুঁইয়া ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০১৬ সালের ১ জুন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ৩৪তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের একজন অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি ২০২২ সালের ০৪ আগস্ট চাটখিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জনক মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভুঁইয়ার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলায়।
তারা উপজেলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের বিদ্যমান সমস্যাসমূহ সমাধান এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে উপজেলা ১১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবগুলো পরিদর্শনসহ প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের সমস্যা চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে তা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন, শিশুদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়া রোধে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। এছাড়াও শিশুদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা, বিদ্যালয়কে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা, বিদ্যালয় পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রেরণসহ প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তারা এ পুরস্কার অর্জন করেছেন।
এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজন এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ২০২৩ সালে দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করে দুজনেই আলোচনায় এসেছেন। সে অনুষ্ঠানে তারা উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে নবযোগদানকৃত ৩৬ জন শিক্ষককে বরণ করার পাশাপাশি বিগত কয়েক বছরে অবসরে যাওয়া ৫৯ জন প্রাথমিকের শিক্ষকদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় সংবর্ধনার ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও উপজেলার ১১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৫৩ জন শিক্ষকের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা শিক্ষকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুরস্কার দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রমে উৎসাহী করে তোলেন।
শ্রেষ্ঠ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কবির বলেন, স্বীকৃতি কাজের গতিকে বৃদ্ধি করে। আমি আগামীতে আরও বেশি কাজ করার চেষ্টা করব ইন শা আল্লাহ। মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ক্ষুদ্র সহযোগী হওয়াই আমার মূল লক্ষ্য।
সংবর্ধিত আরেক অতিথি নোয়াখালী জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া বলেন, একটা সময়ের পর আমরা কেউই বেঁচে থাকব না। কিন্তু আমাদের কাজগুলো বেঁচে থাকবে। সে কারণেই সরকারের একটি ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে কাজ করে যেতে চাই। প্রাথমিক শিক্ষা কাজের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
প্রসঙ্গত, চাটখিল উপজেলায় বর্তমানে ১১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতি বছর চার হাজারের মতো শিশু শিক্ষার্থী এসব স্কুলে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয় এবং একইসঙ্গে চার হাজারের মতো শিক্ষার্থী প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক শ্রেণিতে পদার্পণ করে।
/হাসিব আল আমিন/এফকে/