বগুড়ায় ফের সড়ক অবরোধ করেছেন আইএইচটির শিক্ষার্থীরা
বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) অধ্যক্ষকে অপসারণ এবং ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষকে গ্রেপ্তার না করায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিকেল ৫টায়ও শিক্ষার্থীদের সড়কে দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে বগুড়া শহরের শেরপুর রোডের দুই পাশে কয়েকশ গাড়ির জট লেগে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ। তবে অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে যাতায়াতের সুযোগ করে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ২৯ আগস্ট থেকে তিন দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন করে লাগাতার আন্দোলন করছেন আইএইচটির শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে- বহিরাগত সন্ত্রাসীকে আশ্রয় ও প্রশ্রয়দানকারী অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত-উল-হাসিনের অপসারণ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ইভটিজিংকারী সজল ঘোষের গ্রেপ্তার ও শাস্তি এবং সকল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
পরবর্তীতে ২ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান। কিন্তু মামলার আট দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত সজল ঘোষকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবিও (অধ্যক্ষের অপসারণ) পূরণ হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরা আজ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সড়কে নেমে পড়েন।
শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের দাবিগুলো স্মারকলিপি আকারে ডিসি, এসপি, সিভিল সার্জন অফিসে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ আমাদের দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। মামলা করা হয়েছে। তাতেও কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা সজল ঘোষের সকল অপকর্মের প্রশ্রয়দাতা অধ্যক্ষ। সেই অধ্যক্ষ অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরবো না।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে শেরপুর সড়কের আইএইচটির দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন প্রধান সড়ক ছেড়ে গলি দিয়ে যাতায়াতের চেষ্টা করে। এতে করে শহরের ভেতরেও সড়কগুলোতেও গাড়ির লম্বা লাইন লেগে গেছে। অনেকে গাড়ি ছেড়ে ব্যাগ-বস্তা নিয়ে হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের খবর পেয়ে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম, সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহিনুজ্জামানসহ একাধিক কর্মকর্তারা উপস্থিত হন ঘটনাস্থলে। তাদের উপস্থিতিতেও বিক্ষোভ চলমান রয়েছে।
এসব বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, ওরা যেটা চায় সেটা হলো নিরাপত্তা। আমরা সেটা তাদের দিচ্ছি। মামলা হয়েছে, আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে। শিগগিরই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। আর সড়ক অবরোধের বিষয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তারা দুই পাশ দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।
গতকাল শনিবারও শিক্ষার্থীরা দিনভর বিক্ষোভ করেন। ওই দিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শফিউল আজম বলেন, আইএইচটি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন। এ জন্য আমরা সরাসরি কিছু করতে পারি না। তবে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি পাওয়ার পরপরই আমরা ঊর্ধ্বতনদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে ঢাকা থেকে একটি টিম আসতে পারে। তারা এলে শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্লাস বর্জনের বিষয়গুলোর সুরাহা হতে পারে।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও হোস্টেলের মিল ম্যানেজার আমিনুল ইসলামকে মারধর করেন সজল ঘোষ। এই মারধরকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ রাখার পর তারা কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। তখন থেকেই তারা কলেজের ভেতরে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। অভিযুক্ত সজল ঘোষ বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
আরএআর