‘যুবলীগকর্মী আসাদ হত্যা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে নয়’
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় যুবলীগকর্মী আসাদুজ্জামান আসাদ হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে হয়নি বরং পারিবারিক দ্বন্দ্বে হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মো. বিল্লাল হোসেন সরকার। এ ঘটনায় জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আসামি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন দাবি করেন বিল্লাল হোসেন সরকার। তিনি মামলার প্রধান আসামি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহাবুবুল আলম মনির শ্বশুর।
লিখিত বক্তব্যে পৌর মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকার বলেন, একটি চক্র সত্য ঘটনাকে আড়াল করে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে ইতিপূর্বে সংবাদ সম্মেলন করে। মামলার এজাহারে প্রধান আসামি হিসেবে মাহাবুবুল আলম মনিরকে এবং কামরুজ্জামান, শুভ দে ও সিয়ামের নাম জড়িত করা হয়েছে। অথচ ঘটনার সময় আমি তাদের (মাহাবুবুলসহ অন্যদের) ময়মনসিংহ নগরীর নেক্সাস হাসপাতালে অবস্থান করতে দেখেছি। সেসময়ের সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় নির্দোষ ব্যক্তিদের মামলায় জড়ানো হয়েছে। এতে রাজনৈতিক হয়রানি এবং দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না করে প্রকৃত খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় এনে এবং নির্দোষ ও নিরীহদের মামলা থেকে অব্যাহতির দাবি করছি। সেই সঙ্গে যে চক্রটি প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করছে তাদেরকেও যেন আইনের আওতায় আনা হয়।
উল্লেখ্য, অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে গত ২৮ আগস্ট রাতে যুবলীগকর্মী আসাদুজ্জামান আসাদকে হাত-পা থেঁতলে হত্যা করা হয়। এর আগে চলতি বছরের ৭ জুলাই মারধরের শিকার হয়ে আসাদ যুবলীগ সভাপতি মাহাবুবুল আলমের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। আসাদের বিরুদ্ধেও তখন অপর গ্রুপ মামলা করেছিল।
আসাদ হত্যার পর গত ৩১ আগস্ট নিহতের পরিবার ও তৃণমূল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করা হয়, প্রতিপক্ষ নির্মূলের অংশ হিসেবে আসাদকে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই আকন্দ নিজের বক্তব্যে আসাদ হত্যার পেছনে পৌর মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকার ও তার জামাতা যুবলীগের সভাপতি মাহাবুবুল আলম মনিকে দায়ী করেছিলেন। এছাড়া মনির বিরুদ্ধে আরও নানা অভিযোগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। আসাদ হত্যার ঘটনায় এলাকাতেও নিয়মিত আন্দোলন কর্মসূচিও পালিত হয়েছে।
জানা গেছে, মুক্তাগাছা উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি গ্রুপে নেতৃত্ব দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই আকন্দ। অপর গ্রুপে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ।
প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন পৌর মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকার এবং তার জামাতা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য মাহাবুবুল আলম। মাহাবুবুল এলাকায় জামাই মনি হিসেবেই পরিচিত। আর আবদুল হাই আকন্দের সঙ্গে রয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের বড় একটি অংশ।
প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বহু আগে থেকেই। গত অন্তত পাঁচ মাস ধরে প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ এবং পৌর শহরের বিভিন্ন স্ট্যান্ডের টাকা তোলা নিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারামারির ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা চলমান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, যুবলীগকর্মী আসাদুজ্জামান হত্যার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাতে নিহতের ছেলে তাইব হাসান আনন্দ বাদী হয়ে যুবলীগের সভাপতি মনিসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। চাঞ্চল্যকর মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
উবায়দুল হক/এমজেইউ