বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ১৩
বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা, বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার ও নাশকতার অভিযোগে নেত্রকোণায় বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করে।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলার পূর্বধলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম, কলমাকান্দা থানার ওসি আবুল কালাম ও মদন থানার ওসি মো. তাওহীদুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে জেলার পূর্বধলা উপজেলা থেকে আটক ১৩ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পূর্বধলা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আল হেলালী, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শফিকুল ইসলাম সরকার, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, যুবদল কর্মী মো. আল আমিন খান, রাহাতুল ইসলাম, মো. লাল চান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. আবদুল কাদির, বিএনপি কর্মী মুনজু মিয়া, সোহরাব হোসেন, মো. সোহাগ মিয়া ও বকুল দত্ত। তবে অপর দুজনের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার পূর্বধলা উপজেলার রেলগেট এলাকার দলীয় কার্যালয়ে বিএনপি শোভাযাত্রা, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি থেকে ফেরার পর বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতে আটক নেতাকর্মীসহ ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ জনকে আসামি করে নাশকতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে পুলিশ।
পূর্বধলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য, দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল বের করে। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় পুলিশ বাধা দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। হামলায় থানার এক উপপরিদর্শকসহ পুলিশের চার সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় এসআই শহিদুল ইসলাম মোল্লা বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে শুক্রবার জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি করেন কলমাকান্দা থানা পুলিশের এসআই জয়নাল আবেদিন। এতে ৩৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়।
এছাড়া গত শুক্রবার বিকেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলার মদন উপজেলার সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. লুৎফুজ্জামান বাবরের বাড়ির সামনের পুকুরপাড় থেকে তিনটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয় বলে জানান মদন থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাওহীদুর রহমান। পরে এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই এসআই মো. শাহজাহান সিরাজ বাদী হয়ে ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।
এ বিষয়ে নেত্রকোণা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মো. রফিকুল ইসলাম এসব মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানান। তিনি বলেন, বিএনপিকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলতে ও সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে এভাবে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে একের পর এক গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তবে এসব করে বিএনপিকে দমানো যাবে না।
মো. জিয়াউর রহমান/এএএ