পাট বিক্রি করে চাষের খরচ উঠছে না কৃষকের
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে নাটোরের হাটগুলোতে উঠতে শুরু করেছে নতুন পাট। শুরুতে দাম মোটামুটি সন্তোষজনক থাকলেও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণ প্রতি ৬০০-৮০০ টাকা কমেছে পাটের দাম। হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
পাট চাষিরা বলছেন, চলতি মৌসুমে শুরুতে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ৩০০০-৩২০০ টাকায়। কিন্তু বর্তমানে প্রকার ভেদে ১৬০০-২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাট। শ্রমিকদের খরচ দিতে বাধ্য হয়ে এই দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে।
তবে পাটের ব্যাপারীরা বলছেন, শুরুতে আমদানি কম থাকায় দাম একটু বেশি ছিল। বর্তমানে বাজারে আমদানি বাড়ায় দাম কমের দিকে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর ৩১ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭৩ হাজার ২৭৭ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত জেলার ২৯ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমির পাট কর্তন করা হয়েছে। যেখান থেকে পাট উৎপাদন হয়েছে ৭৩ হাজার ৬৭৩ মেট্রিক টন। যা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।
সরেজমিনে নাটোরের সর্ববৃহৎ পাটের বাজার তেবাড়িয়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, ভোর সাড়ে ৫টা থেকে নাটোর ও আশপাশের জেলা থেকে বিভিন্ন পরিবহন যোগে আসতে শুরু করে পাট। এই পাট কিনতে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন ব্যাপারীরা। এদিন হাঁটে পাটের প্রকারভেদে বাজার গিয়েছে ১৬০০-২৪০০ টাকা (প্রতি মণ)। কৃষকরা বলছেন, এই দামে পাট বিক্রি করে চাষের খরচ উঠছে না।
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাসিলা এলাকা থেকে হাটে পাট বিক্রি করতে আসেন কৃষক আবেদুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পাট উৎপাদন করতে খরচ পরিছে (প্রতি মণ) ১৯০০-২০০০ টাকা। এখন বাজারে এসে দেখি পাট বিক্রি হচ্ছে ২১০০-২২০০ কইরি। এই দামে বিক্রি করে লাভ কইরতে পাইরতেছি না।’
তাহলে এই দামে বিক্রি করছেন কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আবেদুল বলেন, ‘কী করবো এখন। ঘরে থুইয়া লাভ কি। কামলাদের টেকা দিতে হবি।’
নাটোরের আহম্মেদপুর থেকে পাট নিয়ে আসেন কৃষক মহরম আলী। তিনি বলেন, আমার পাটের দাম বলছে (প্রতি মণ) ১৬০০-১৭০০ টাকা। আর ভালোগুলা ২০০০-২৩০০ টাকা । আমরা যেই টাকা খরচ করছি সেই হিসেবে টাকা উঠছে না। সার-ওষুধ দিয়ে এই দামে বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না।
হাটে সদর উপজেলার ছাতনী ভাটপাড়া এলাকার কৃষক বাবুলকে দেখা যায় দরদাম করে পাট বিক্রি করছেন। কেমন দামে বিক্রি করলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২২০০ টাকায় বিক্রি করলাম। সারের দাম, লেবার খরচ হিসাব করলে এই দামে বিক্রি করে লস। ৩০০০-৩৫০০ টাকা (প্রতি মণ) বিক্রি করতে পারলে লাভ হবি।’
হাটে হালসা থেকে আসা পাটের ব্যাপারী জাকির খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েক দিন আগে বাজারে পাটের আমদানি কম ছিল। এখন আমদানি বেশি তাই দাম একটু কমছে। পাশাপাশি পাটের মোকামে দাম কম দেওয়া হচ্ছে।
তবে জামাল নামে আরেক পাটের ব্যাপারী বলেন, এ বছর পানি কম থাকায় অল্প পানিতে বেশি পাট জাগ দিতে হয়েছে। ফলে পাটের রং ভালো হয়নি। তাই মোকামে এই পাটের চাহিদা কম থাকায় পাটের দাম একটু কম। তবে ভালো পাটের দাম বেশি।
নাটোরের পাট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বালাজি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী অজয় কুমার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার বিভিন্ন হাটবাজার থেকে যে পাট ছোট ছোট ব্যাপারীরা আনেন তা আমরা কিনে থাকি। তারপর পাটগুলোকে প্রসেসিং করে রপ্তানি করি। বর্তমানে পাটের কোয়ালিটি অনুযায়ী ব্যাপারীদের থেকে প্রতি মণ ২২০০-২৮০০ টাকায় কিনছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মিল এখনো সন্তোষজনকভাবে পাট কিনছে না। সেই সঙ্গে বাজারগুলোতে পাটের আমদানি বেশি হওয়ার কারণে দাম একটু কমে গেছে। তবে সামনে পাটের দাম বাড়বে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর ইতোমধ্যেই জেলার পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম হয়েছে। জেলার ৯৩ শতাংশ পাট কর্তন হয়েছে।
পাটের দাম কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, উৎপাদন খরচের দিক চিন্তা করে কৃষকরা যদি আরও একটু দাম বেশি পেতেন তাহলে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতেন। কৃষকরা যাতে পাটের ন্যায্যমূল্য পান তার জন্য কৃষি বিভাগ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা করছে।
আরএআর