সাতক্ষীরায় টানা বর্ষণে ৩০ গ্রাম প্লাবিত, দুর্বিষহ জনজীবন

সাতক্ষীরায় টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ৩০ গ্রামের মানুষ। সাতক্ষীরা সদরের ধুলিয়ার ইউনিয়নের প্রায় ২২ গ্রামের বসতবাড়ি ক্ষেতখামার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। এছাড়াও সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম আংশিক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার কামালনগর দক্ষিণপাড়া, পলাশপোল, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, কাটিয়া মাঠপাড়া, রথখোলা, মুনজিতপুরসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসীরা দাবি দ্রুত বেতনা নদী পূর্ণ খননের কাজ শেষ না হলে বছরের ছয় মাস পানিতে ডুবে থাকতে হবে তাদের। তাই দ্রুত বেতনা নদী খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা। ভুক্তভোগীদের দাবি, জনপ্রতিনিধিদের যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন তারা।
সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর এলাকার তরিকুল ইসলাম জানান, সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই শহরের অর্ধেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে অনেক বছর যাবৎ শহরের মানুষের এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী যে নদী রয়েছে সেগুলো পুনরায় খনন করা হলে এই সমস্যা থাকবে না। একই সঙ্গে পৌরসভার আওতাধীন পানি সরবরাহের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করাটাও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।
স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত জানান, কাটিয়া মাঠপাড়া, মুনজিতপুরসহ বিভিন্ন নীচু এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশনের পথগুলো মাছ চাষিদের দখলে থাকায় প্রতিবছরই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাণসায়র খননের পরও তার কোনো সুফল পৌরবাসী পায়নি।
জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য শিক্ষক শহীদুল ইসলাম জানান, অকালের সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা শহরের পূর্বাঞ্চল। বিশেষ করে পুরাতন সাতক্ষীরা আলিয়া মাদ্রাসা পার হলেই আশাশুনি সড়কের দু’ধারে দেখা যায় জলাবদ্ধতার চিত্র। বাড়িঘরে ও যাতায়াতের পথে পানি উঠে গেছে। ফসল ও বাড়ি ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার নারী, শিশু ও বয়স্করা পড়েছেন চরম বিপাকে। পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন তারা।
ধুলিহর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় বেতনা নদী দিয়ে। তবে নদী শাসনের ফলে বেতনা আজ অস্তিত্ব সংকটে। এছাড়া অপরিকল্পিত মাছের ঘের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। সুইচ গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাটসহ বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। গত কয়েকদিনের বৃষ্টির প্রভাবে জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে প্রায় ২২ গ্রামের মানুষ। এতে অনেকের কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া অসংখ্য মাছের ঘের ও আবাদি জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সোমবার দুপুরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখিতভাবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতার বিষয়টি অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
সাতক্ষীরা পৌরসভার (ভারপ্রাপ্ত) মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের কারণে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রায় ৮টি গ্রাম জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে বসত বাড়ি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবাদি জমি ও মৎস্য ঘেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জলাবদ্ধতার বিষয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শহরের জলাবদ্ধতার শিকার এলাকাগুলোর সড়ক উঁচু করাসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
সোহাগ হোসেন/এএএ