এমটিএফই’র ফাঁদে ২০ লাখ টাকা হারিয়েছেন নারী
ফেনী শহরের নাজির রোডের এক নারী গত এক বছরে এমএলএম কোম্পানি এমটিএফইতে বিনিয়োগ করেছিলেন ২০ লাখ টাকা। এতদিন নিজেকে তিনি লাখপ্রতি ভাবলেও হঠাৎ করে কোম্পানিটি লাপাত্তা হওয়ায় সব টাকা হারিয়েছেন ওই নারী।
একইভাবে শহরের শাহ আলম নামে একজন ব্যাংকার এমটিএফই’র এজেন্ট এক বন্ধুর কথায় বিশ্বাস করে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা হারিয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ৫০১ ডলার বা ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে দিন শেষে ৫ হাজার টাকা, ৯৩০ ডলার বা ১ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিয়োগ করলে মাসে ৪৫ হাজার টাকা লাভ দিতো এমটিএফই। এমন লোভনীয় আয়ের খাতে বিনিয়োগদের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, চাকরিজীবী, প্রবাসী, প্রবাসীদের পরিবারের সদস্য, উঠতি বয়সী তরুণসহ ফেনীর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের কথা হলেও তারা কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি। তবে তাদের দেওয়া তথ্য মতে, ফেনীর প্রায় হাজারো মানুষ এমটিএফইতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। অনেকে গয়না এবং মূল্যবান সামগ্রী বন্ধক রেখেও বিনিয়োগ করেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগীদের একজন বলেন, গত ৫ আগস্ট শহরের একটি রেস্টুরেন্টে এমটিএফইতে বিনিয়োগে উৎসাহী করে তুলতে আলোচনা ও রাতের ভোজের আয়োজন করে কোম্পানির এজেন্ট নামে পরিচিত সালাহউদ্দিন আকবর নামে এক ব্যক্তিসহ তার সহযোগীরা। সেদিন রাতে ওই সভায় ২২০ জন বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করে রাতের ভোজে অংশ নেন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শহরের মিজান রোডের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন জানান, সভায় মূলত বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হয়েছে। সেখানে এই বিনিয়োগকে শতভাগ নিরাপদ ও লাভজনক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ এবং নিষিদ্ধ। বেআইনি হলেও নিজেকে এমটিএফই’র এজেন্ট বলে দাবি করা এবং অসংখ্য মানুষকে প্রভাবিত করার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন আকবরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। একই সঙ্গে তার হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও তা দেখেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। এরপর আরও একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছ, অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন আকবর নামে ওই ব্যক্তি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফেনীর সন্তান ও আওয়ামী লীগ নেতা আকরাম হোসেন হুমায়ুনের ভাগিনা বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
একাধিক বিনিয়োগকারী জানান, গত শুক্রবার রাতে তারা বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। গত ১৫ দিন যাবত টেকনিক্যাল সমস্যার কথা বলে এই কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কমিশন বন্ধ রেখেছিল। এখানে যারা টাকা দিচ্ছিলেন তারা আর টাকা উঠাতে পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার থেকে আর কোনো লেনদেন করা যায়নি। শুক্রবার পুরোপুরিভাবে এমটিএফই তাদের সিস্টেম বন্ধ করে দিয়েছে।
তারা আরও জানানু, এই কোম্পানির লেনদেন বা ট্রেড হতো সপ্তাহে ৫ দিন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত। সোমবার থেকে শুক্রবার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ট্রেড হলেও সিওদের জন্য লেনদেন হতো শনিবারসহ সপ্তাহে ৬ দিন। রোববার কার্যক্রম বন্ধ থাকতো।
এ প্রসঙ্গে ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে বিভিন্ন সাইটে অল্প বিনিয়োগে অভাবনীয় লাভের লোভ দেখিয়ে অনেক কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ফেনীতে এটির বড় একটি অংশ যুবক এবং প্রবাসী পরিবার। এজন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন থেকে বের হয়ে এসে নিজ পরিশ্রমের মাধ্যমে কিছু করার চেষ্টা করলে এই ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতো না তারা।
ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, এ বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরএআর