১১ বছর পর চালু হচ্ছে রামসাগর এক্সপ্রেস, আনন্দে ভাসছেন স্থানীয়রা
বন্ধ রামসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন ১১ বছর পর পুনরায় চালু হওয়ার খবরে উত্তরের তিন জেলায় আনন্দের বন্যা বইছে। বিশেষ করে গাইবান্ধা জেলার ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী ও চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশীদের যেন আনন্দের সীমা নেই। কারণ ট্রেনটি চালু হলে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
রংপুর-দিনাজপুরগামী যাত্রীদের কমবে ভোগান্তি ও অতিরিক্ত ব্যয়। বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সহজ হবে কর্মজীবীদের যোগাযোগও। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও এই অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে আগামী ২৯ আগস্ট ট্রেনটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মাহামুদ হাসান রিপন। এটি উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের বিশেষ করে গাইবান্ধা, রংপুর ও দিনাজপুরের মানুষের যাতয়াতের সুবিধার্তে ২০১০ সালের ১২ নভেম্বর চালু করা হয় আন্তনগর ‘রামসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেন। সে সময় গাইবান্ধার বোনারপাড়া থেকে রংপুরের কাউনিয়া ও রংপুর হয়ে দিনাজপুর পর্যন্ত চলাচল করতো ট্রেনটি। সকাল সাড়ে ৬টায় বোনারপাড়া স্টেশন থেকে ছেড়ে গিয়ে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টায় পৌঁছাতো দিনাজপুরে। কম ভাড়া এবং নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানোর কারণে ট্রেনটি গাইবান্ধার মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। গাইবান্ধাসহ এই রুটের মানুষ রংপুর হয়ে দিনাজপুরে এবং দিনাজপুরের যাত্রীরা এই ট্রেনে করে বিভাগীয় শহর রংপুরে চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দাপ্তরিক কাজকর্ম শেষ করে সন্ধ্যায় একই ট্রেনে ফিরতো। কিন্তু জনবল সংকটসহ নানা অজুহাতে তিন বছরের মাথায় ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট বন্ধ করে দেওয় হয় ট্রেনটি।
ট্রেনটি বন্ধ হওয়ার পরে বোনারপাড়া, গোবিন্দগঞ্জ, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ গাইবান্ধাসহ রংপুর বিভাগের অন্যান্য জেলার মানুষের যোগাযোগের চরম সংকট দেখা দেয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কারমাইকেল কলেজ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক, ব্যবসায়ী এবং কর্মজীবীসহ সাধারণ যাত্রীরাও পড়েন চরম সংকটে। তারা বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে যোগাযোগে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় করেন।
ট্রেনটি বন্ধ হওয়ার পর থেকেই সংকট উত্তরণে আন্দোলন করেন গাইবান্ধা-রংপুরের নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ। ট্রেনটি চালুর দাবিতে জোড়ালো আন্দোলন হয় ২০২০ সালে। ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরাঞ্চলের বহুল জনপ্রিয় ট্রেনটি পুনরায় চালুর দাবিতে বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে গণমিছিল সমাবেশ ও ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন দুপুর ১২টা ২২ মিনিট থেকে ১২টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত ৩০ মিনিট অবোরোধ করে রাখেন স্থানীয়রা।
এদিকে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের সংসদ ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুর পর ওই আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপি প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় বন্ধ রামসাগর ট্রেন চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন মাহমুদ হাসান রিপন। ট্রেন চালুর দাবিতে রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, নাগরিক সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলন এবং এমপি মাহমুদ হাসানের প্রচেষ্টায় ২৯ আগস্ট চালু হচ্ছে ‘রামসাগর এক্সপ্রেস’।
সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া এলাকার মশিউর রহমান মোল্লা বলেন, ট্রেনটি চালু হলে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবেন। যোগাযোগে ভোগান্তির অবসান হবে এক যুগের। কেননা এই এলাকার অনেক শিক্ষার্থীই রংপুর কারমাইকেল কলেজ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। তাদের যাতায়াতে এটি অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
পাইকারী ব্যবসায়ী মন্টু মিয়া বলেন, ট্রেনটি চালু হলে এলাকার মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার হবে। পণ্য আনা-নেওয়ায় অতিরিক্ত খরচ বাঁচবে। অনেক সময় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে করে পণ্য আনা নেওয়া করতে হয়। ট্রেনটি চালু হলে এই অর্থ ব্যয় এবং ভোগান্তি দুটোয় কমবে।
কামালেরপাড়া ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা মোজাহার আলী বলেন, অনেকদিন বন্ধ থাকার পর এই ট্রেনটি চালু হচ্ছে। এটি চালুর জন্য ইতোপূর্বে অনেক আন্দোলন হয়েছে। মাহমুদ হাসান এমপি হওয়ার পর তার প্রচেষ্টায় রামসাগর ট্রেন চালু হচ্ছে। বিষয়টি সত্যিই অনেক আনন্দের-উল্লাসের।
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, সাঘাটা-ফুলছড়ির মানুষকে দেওয়া নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ এবং অঞ্চলের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, কর্মজীবী ও চিকিৎসা প্রত্যাশী মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের স্রোতধারায় ট্রেনটি পুনরায় চালু করা হচ্ছে। ট্রেনটি চালু হলে এই অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ সুফল ভোগ করবে। আগামী ২৯ আগস্ট ট্রেনটি চালু হবে। পর্যায়ক্রমে আরও চমক আসছে।
বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার খলিলুর রহমান বলেন, কোনো রেলপথে রেল বাড়ানো বা চালু হওয়া মানেই উন্নয়ন। ট্রেনটি চালু হলে অবশ্যই অনেক যাত্রী পাওয়া যাবে এবং রাজস্বও আয় হবে। এখান থেকে প্রচুর মানুষ প্রতিদিন রংপুরসহ উত্তরের জেলাগুলোতে আসা-যাওয়া করে। বিশেষ করে এই এলাকার সব বয়সের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন রংপুরে চিকিৎসা নিতে যায়।
রিপন আকন্দ/আরএআর