গাঁজা পরিবহনের রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে রাজশাহী
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সম্প্রতি রাজশাহীতে ২৪০ কেজি গাঁজার বড় চালান আটক করেছে। এই বিপুল পরিমাণের গাঁজা উদ্ধার নিয়ে প্রশ্ন জন্মেছে, রাজশাহীতে কি গাঁজাসেবি বেড়েছে, নাকি এ অঞ্চলকে গাঁজা পরিবহনের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এছাড়া গত বুধবার রাতে নগরীর লক্ষ্মীপুর বাগানপাড়া থেকে প্রায় সাড়ে ১২ কেজি গাঁজা জব্দ করে র্যাব-৫। এসময় পাঁচজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তারা সবাই বয়সে তরুণ। নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজশাহীতে গাঁজাসেবি বেড়েছে ঠিকই তবে রাজশাহী এই মাদক চালানের রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বেশি।
রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়েন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগে গেল আট মাসে ছয় জেলায় ৭০০ টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এই অভিযানে ২৪২ জনের বিরুদ্ধে ২১৬ মামলা হয়েছে। এসময় বিভিন্ন মাদকের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি উদ্ধার হয়েছে গাঁজা। যা পরিমাণের হিসেবে দাঁড়ায় ৯৫০ কেজি। এসব গাঁজা সাধারণত কুমিল্লা কুড়িগ্রাম ও ব্রহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা গাঁজা রাজশাহী হয়ে পাবনা, ঈশ্বরদী ও যশোরের দিকে যায়। একইভাবে রংপুর, কুষ্টিয়ার দিকেও যাচ্ছে।
জানা গেছে, ৭ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়িতে গাঁজা পাচারকালে তিনজনকে আটক করে রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়। এসময় তাদের থেকে ২৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মৃত নুরুজ্জামানের ছেলে নুর আলিম সরকার মিলন (৩৭), আবু হোসেনের ছেলে মোমিনুল ইসলাম (৩৬), জয়নাল আবেদীনের ছেলে হোসাইন আহম্মেদ (২৩)। তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা।
তার একদিন পরে (৮ আগস্ট) চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৬ কেজি গাঁজাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। রাতে সদর উপজেলার হাতাপাড়া এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টে কুমিল্লা থেকে ছেড়ে আসা একটি মিনি পিকআপ থেকে এসব মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, শিবগঞ্জ উপজেলার কানসার্ট ইউপির বাগদূর্গাপুরের মোজাম্মেল হকের ছেলে জনি ইসলাম (২৮), বিশ্বনাথপুর মোকারিম টোলার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৮), মুন্সিটোলার লুটু আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (২৪) ও মোকারিম টোলার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে নাসির উদ্দিন (৩৫)।
ডিবি পুলিশ জানায়, কুমিল্লা থেকে ছেড়ে আসা একটি মিনি পিকআপ দাঁড় করিয়ে তল্লাশি করা হয়। পরে বিশেষ কায়দায় লুকানো হলুদ ও মরিচের গুঁড়ার বস্তার ভেতরে স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো ৩৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এসময় ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, রাজশাহীতে গেল আট মাসে ৯৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব গাঁজা সাধারণত কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম ও ব্রহ্মণবাড়িয়া থেকে এসে রাজশাহী হয়ে পাবনা, ঈশ্বরদী ও যশোরের দিকে যায়। একইভাবে রংপুর, কুষ্টিয়ার দিকে যায়।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম থেকে রাজশাহীতে গাঁজা নিয়ে আসা হয়। তারপরে রাজশাহীকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে রাজশাহীতে গাঁজাসেবি বেড়েছে ঠিক। তার চেয়ে বেশি রাজশাহী রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তবে আমাদের কাছে এখনও তথ্য নেই যে এগুলো আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চল রুট হিসেবে ব্যবহার করে বিদেশে চলে যাচ্ছে কিনা।
শাহিনুল আশিক/আরকে