রাজবাড়ীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নেই কোনো তৎপরতা
সারাদেশের ন্যায় রাজবাড়ীতেও বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৬২ জন রোগী। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ জন। জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও মশা নিধনে পৌরসভার নেই কোনো তৎপরতা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৬২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়াও চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে আগস্ট ১৪ তারিখ পর্যন্ত জেলায় মোট ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৩৯ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৫৭৭ জন রোগী।
সরেজমিনে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা খারাপ। ড্রেনের মধ্যে দীর্ঘদিনের পানি জমে আছে। ময়লা আবর্জনা দিয়ে ড্রেন ভরে যাওয়ায় পানি প্রবাহ হতে পারছে না। এছাড়াও বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাটে দীর্ঘদিন পানি জমে থাকছে। এর ফলে সেখানেও এডিশ মশা বংশ বিস্তার করছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান মেয়র আসার পর থেকে পৌরসভার তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাট সংস্কার হয়নি। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। এছাড়াও বর্তমান সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়াতেও ডেঙ্গু মশা নিধনে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি পৌরসভার মেয়রকে।
পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, মশা নিধনে বাজেট স্বল্পতা ও ওষুধ ছিটানো ফগার মেশিন সংকট রয়েছে।তারপরও নিয়মিত ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম চলামন রয়েছে।
জানা গেছে, পৌরসভার ১৩টি ফগার মেশিন থাকলেও সচল রয়েছে মাত্র তিনটি, যা জেলা শহরের অফিস আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ৯টি ওয়ার্ডের জন্য অপ্রতুল।
পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সজ্জনকান্দা গ্রামের জমিদার সড়কের বাসিন্দা মারুফ, সাগর, কুতুবউদ্দিন, চন্দনা, সাইফুল বলেন, আমাদের বাড়ির সামনে ড্রেন ভরে যাওয়ায় পানি রাস্তার ওপর উঠে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির সামনে ড্রেনের নোংরা পানি জমে থাকে। পৌরসভার মেয়রকে বিষয়টি জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। পানি জমে থাকার ফলে এখানে এডিশ মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। আমরা মশার যন্ত্রণায় রাতে ঘরে থাকতে পারি না। এছাড়া মশা নিধনে আমাদের এলাকায় পৌর সভার পক্ষ থেকে ওষুধ দেওয়া হয়নি।
টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী বলে, আমাদের স্কুলের ভবনের পাশেই অর্থাৎ হাসপাতালের পেছনে একটি বড় নালা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই নালায় পানি জমে থাকে। পচা গন্ধ বের হয়। আমাদের ক্লাস চলাকালীন জানালা বন্ধ না রাখলে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে যাই। আমাদের অনেক সহপাঠী এখান থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
কাজীকান্দা এলাকার বাসিন্দা সবুজ বলেন, আমাদের এলাকায় কবে মশা নিধনে ওষুধ দেওয়া হয়েছে মনে নেই। বর্তমানে মশা নিধনে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। এলাকার রাস্তা ঘাট, ড্রেন অপরিষ্কার। মশার উৎপাতও অনেক। মশার ভয়ে দিনের বেলাতেও জানালা বন্ধ রাখতে হয়।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র আলমগীর শেখ তিতু বলেন, মশা নিধনের জন্য আমাদের আপাতত কোনো বাজেট নেই। পৌরসভার ১৩টি ফগার মেশিনের মধ্যে ১০টি নষ্ট। তিনটি মেশিন চালু থাকায় তা দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। বাজেট না থাকায় চেষ্টা করছি ব্যক্তিগতভাবে আমি ওষুধ এনে মশক নিধনের কাজ করতে। তবে মশা নিধন কার্যক্রম চলামান আছে এবং থাকবে। এখন রুটিন করে একেকদিন একেক ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
মীর সামসুজ্জামান/আরএআর