রূপালী ব্যাংকের ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ, কর্মকর্তা উধাও
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রূপালী ব্যাংকের জয়নগর বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাংকের ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা নিখোঁজ রয়েছেন।
এ ঘটনায় ব্যাংকটির গোপালগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএমকে দায়িত্বহীনতার দায়ে বদলি করা হয়েছে। শাখাটির নতুন ব্যবস্থাপক ফাইজুর রহমান পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের ইমিগ্রেশন শাখায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মুহাম্মদ মফিজুর রহমান একই উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের ফলসি গ্রামের মো. মতিয়ার রহমান মোল্যার ছেলে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, রূপালী ব্যাংকের জয়নগর বাজার শাখার নিখোঁজ ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মফিজুর রহমান ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতি ও আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতীয়মান এবং তিনি যে কোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন। তিনি যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, মুহাম্মদ মফিজুর রহমান ২০১৯ সাল থেকে রূপালী ব্যাংকের জয়নগর বাজার শাখায় শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। চলতি বছরের জুলাইয়ে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় থেকে একটি টিম ওই শাখায় অডিটে আসে। জরিপে ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও আর্থিক অনিয়ম খুঁজে পায় তারা। এরপর গত ২৬ জুন শাখাটি থেকে মুহাম্মদ মফিজুর রহমানকে বদলি করে ওই শাখায় নতুন শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. ফাইজুর রহমানকে নিযুক্ত করা হয়।
গত ১ আগস্ট মো. ফাইজুর রহমান যোগদান করতে ও দায়িত্ব বুঝে নিতে ব্যাংকে আসলে কর্মরত শাখা ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মফিজুর রহমান ব্যাংক থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে পরের দিন কাশিয়ানী থানায় অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ব্যাংকের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, নিখোঁজ ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মফিজুর রহমান ব্যাংক শাখায় বড় ধরনের অর্থ আত্মসাৎ ও আর্থিক অনিয়ম করেছেন। ব্যাংক হিসাবে যার পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি টাকার বেশি। যে কারণে তিনি আত্মগোপন করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনিয়মের বিষয় খতিয়ে দেখতে রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম কাজ করছে। তদন্তের পর মুহাম্মদ মফিজুর রহমান নিখোঁজের রহস্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন তারা। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তারা।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ মফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি। জেলা শহরে মিয়াপাড়া এলাকায় তার বাসায় গেলেও বাড়িতেও কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে তিনি তার শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নিয়ে বসবাস করতেন। আরও জানা যায়, বাড়িটি তার শ্বশুরের নামে থাকলেও মূল মালিক মুহাম্মদ মফিজুর রহমান। কয়েক বছর আগে তিনি বাড়িটি কেনেন।
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে কাশিয়ানী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ আলম বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তার ঘটনায় ব্যাংকের নতুন শাখা ব্যবস্থাপক মো. ফাইজুর রহমান গত ২ আগস্ট থানায় মুহাম্মদ মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে দুদক তদন্ত করছে।
আশিক জামান/এএএ