গ্রুপ কমান্ডার ও অস্ত্রভান্ডাররক্ষক হয়েও তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন
তিনি ছিলেন গ্রুপ কমান্ডার। দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রভান্ডারের। পাশাপাশি গ্রুপের অর্থ ও প্রশাসনিক দায়িত্বও তার কাঁধে ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম দেখতে পারছেন না বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম (৬৮)। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য কয়েকবার আবেদন করেছেন রফিকুল ইসলাম। তবু মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার সম্মান। এখন তার শেষ ইচ্ছা, মৃত্যুর পর যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদাটুকু পান।
তিনি বলেন, ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে ডামুড্যা-গোসাইরহাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার ইকবাল হোসেন বাচ্চু ছৈয়ালের অধীনে আমি যুদ্ধে অংশ নিই। সেখানে আমাকে একটি প্লাটুনে কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন পরিচালনা করি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা যখন অস্ত্র জমা দিই, তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের সনদ দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সনদ এখন উইপোকায় খেয়ে ফলেছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাইনি, সম্মান পাইনি। নিজের পরিবার-পরিজন রেখে জীবনবাজি নিয়ে যে সংগ্রাম করলাম, তার বিনিময়ে এখন অবহেলা পাচ্ছি। আমার পরিবারে খবর কেউ রাখে না। বুকটা ফেটে যায়, যখন দেখি আমার সহযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। আমার হয়তো সে সৌভাগ্য হবে না, বলেন তিনি।
রফিকুল ইসলামের সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালে ভারতের বাঘমারা ট্রেনিং সেন্টার থেকে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে যুদ্ধে অংশ নেন। তরুণ ও প্রতিভাবান হওয়ায় তাকে যুদ্ধের পাশাপাশি একটি গ্রুপের কমান্ডার ও ইউনিটের অস্ত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যুদ্ধের পর বিয়ে করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। পরে ফিরে এসে সখিপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
২০১৭ সালে যখন মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই হয়েছিল, তখন তিনি আবেদন না করার কারণে বাদ পড়েন। তখন তার সহযোদ্ধারা আওতাভুক্ত হলেও তিনি হতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা দিদার মাস্টারের লেখা ‘শরীয়তপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ নামক বইয়ে তার নাম রয়েছে।
রফিকুলের সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রফিকুল আমার সঙ্গে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আমি আর সে একসঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষ করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। সে ছিল গোসাইরহাটের সেক্টরে, আমি ছিলাম ভেদরগঞ্জের অধীনে। ২০১৭ সালে যখন যাচাই-বাছাই হয়েছে, তখন সে উপজেলায় বসে কান্না করছিল। কিন্তু আমাদের কিছু করার ছিল না।
গোসাইরহাট যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হোসেন বাচ্চু বলেন, রফিকুল ইসলাম ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আমার প্লাটুনে কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের দায়িত্বে ছিলেন। কত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন দেশে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আজও তার নাম তালিকাভুক্ত হয়নি।
এ বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আল নাসীফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যদি রফিকুল ইসলাম আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেন, তাহলে যাচাই-বাছাই কমিটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ