ছুটির দিনে গ্রাম আদালতে ঝুলন্ত মরদেহ, নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ
নওগাঁর পোরশায় ছুটির দিনে গ্রাম আদালত বসিয়ে নির্যাতনে এক যুবককে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) সকালে উপজেলার নিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের বিচারিক কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিকেলে আদালত কক্ষ থেকে লাফারু ইসলাম (৩২) নামে ওই যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত লাফারু একই ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া গ্রামের কুরবান আলীর ছেলে।
স্থানীয় ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) উপজেলার একটি ভাঙারি দোকান থেকে চুরি যাওয়া সাইকেল উদ্ধারের সূত্র ধরে আশিক নামে এক যুবককে আটক করেন স্থানীয়রা। সেই সূত্র ধরে সাইকেল চুরির ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠে লাফারু ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় উদ্ধার হওয়া সাইকেলের মালিক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে লাফারু ও আশিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। অভিযোগের সূত্র ধরে শুক্রবার সকালে ওই দুই যুবককে গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় আটক করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক। পরে চেয়ারম্যানের হেফাজতে তাদের নেওয়া হয় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের বিচারিক কক্ষে। এর কয়েক ঘণ্টা পর দুপুরে ওই কক্ষে লাফারু ইসলামের মরদেহ জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলতে দেখা যায়। বিষয়টি জানার পরই বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ওই সার্কেলের আওতাধীন একজন সহকারী পুলিশ সুপার। সেখানে তাদের উপস্থিতিতেই মরদেহটি উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি সদস্য বলেন, ছুদির দিনে কখনোই গ্রাম আদালত বসে না। তবে লাফারুকে ছুটির দিনেই আটক করে গ্রাম আদালতে নেওয়া হয়। তাকে আটকের প্রক্রিয়া বৈধ ছিলো না। মরদেহে আঘাতের চিহ্ন দেখতে এগিয়ে গেলেও তা দেখতে দেওয়া হয়নি। নিশ্চয়ই আদালত কক্ষে তার সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছে। ঝুলন্ত মরদেহটি স্বাভাবিক মনে হয়নি। সঠিকভাবে তদন্ত করলেই রহস্য বেরিয়ে আসবে।
৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আকবর হোসেন বলেন, লাফারু এবং অভিযোগকারী দুজনই আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। অথচ তাকে (লাফারু) আটকের আগে বিষয়টি আমাকে অবগত করা হয়নি। পরে শুনেছি দুজন গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় লাফারুসহ আরো একজনকে আটক করে হেফাজতে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। পরে লাফারুর মৃত্যু হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে নিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পোরশা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল করে মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই গ্রাম পুলিশকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
নওগাঁর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মান্দা সার্কেল) মতিয়ার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগের সূত্র ধরে দুই গ্রাম পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তারা অভিযোগ করলে এ ঘটনায় মামলা রুজু করা হবে।
অভিযোগ না পেলে পুলিশ কী কোনো পদক্ষেপই নেবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করার সুযোগ নেই। তারা (নিহতের পরিবার) যদি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অভিযোগ না করে, সেক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলীম উল্লাহ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি জানার পরই সেখানে গিয়ে মরদেহটির সুরতহাল করেছি। মরদেহে কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সেই বিষয়গুলো উল্লেখ করে ময়নাতদন্তের জন্য রেফার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শুক্রবার দিন গ্রাম আদালত বসার কথা না। চেয়ারম্যান হয়তো ছুটির দিনে নিজে থেকেই অফিস খুলেছেন। ছুটির দিন গ্রাম আদালত খোলার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনে এ ঘটনা আলাদাভাবে তদন্ত করে দেখবে জেলা প্রশাসন।
আরমান হোসেন রুমন/জেডএস