হাঁস-মুরগি-ছাগলের সঙ্গে শিয়ালের বসবাস
গ্রাম্য একটি প্রবাদ আছে এরকম- ‘অসময়ে বর্ষাকাল ছাগলে চাটে বাঘের গাল’। এর মানে বেকায়দায় পড়লে ছাগলও ভয়ংকর বাঘের গাল চাটে। ঠিক এমনই এক ঘটনা ঘটেছে নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুড়া ইউনিয়নের নয়নকান্দি গ্রামে। এ গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হকের বাড়িতে ছাগলে বাঘের গাল না চাটলেও হাঁস, মুরগি ও ছাগলের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করছে একটি শেয়াল। তবে শেয়ালটি বেকায়দায় পড়ে নয়, নিজ ইচ্ছেতেই হাঁস, মুরগি ও ছাগলের সঙ্গে বসবাস করছে।
বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর উৎসুক জনতা ওই বাড়িতে ভিড় করছেন। এরই মধ্যে আজিজুলের বাড়িটি এলাকায় শেয়াল বাড়ি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, আজিজুল হক তার বাড়িতে হাঁস, মুরগি ও ছাগলের সঙ্গে শেয়ালটিকেও পরম যত্নে লালন-পালন করছেন। তবে এসব পশুপাখি লালন-পালনের মূল দায়িত্ব পালন করেন আজিজুলের স্ত্রী সুমা আক্তার। তারা গৃহপালিত শেয়ালটির নাম দিয়েছেন লালু।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শেয়ালটি বাড়ির পাশে একটি টিলায় বসে আছে। উঠানে ১২টি ছাগল ও বেশ কয়েকটি হাঁস-মুরগি রয়েছে। সুমা আক্তার একটি পাত্রে খাবার দিলে হাঁস-মুরগি ও শেয়াল একইসঙ্গে ওই পাত্রে খাবার খাচ্ছে। আর ছাগলগুলো তাদের চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে।
এ সময় সুমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত দেড় বছর আগে আমার স্বামী নাজিরপুর ইউনিয়নের লোহারগাঁও এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে দেখেন একটি জলাশয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কয়েকজন নারী মাছ ধরছিলেন। এ সময় তারা পাশের একটি জঙ্গলে তিনটি শেয়ালের বাচ্চা দেখতে পান। তখন তারা শেয়ালগুলোকে উদ্ধার করেন। পরে তাদের কাছ থেকে আমার স্বামী একটি শেয়াল চেয়ে নিয়ে আসেন। তখন শেয়ালটির আনুমানিক বয়স ছিল তিন মাস।
তিনি আরও বলেন, বাড়িতে আনার পর শেয়ালটিকে কী খাওয়াব কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না। পরে আমি একটি বোতলে দুধ ভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করি। তবে প্রথম দিন ব্যর্থ হলেও পরদিন থেকে প্রায় এক মাস দুধ খাওয়ানো হয়। তারপর থেকে শেয়ালটি প্রায় সব ধরনের খাবারই খায়। বর্তমানে শিয়ালটির বয়স প্রায় দুই বছর।
বাড়িতে একটি শেয়াল ছাড়াও ১২টি ছাগল এবং বেশ কয়েকটি হাঁস ও মুরগি রয়েছে। তাদের থাকার জন্য বাড়ির উঠানে একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। ওই ঘরেই শেয়ালসহ হাঁস-মুরগি ও ছাগলগুলো থাকে বলে জানান সুমা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আকবর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে শেয়াল, ছাগল, হাঁস, মুরগিগুলো ছেড়ে দেওয়ার পর তারা বাড়ির পাশে একটি টিলায় চলে যায়। দিন শেষে সন্ধ্যার আগেই শেয়ালটি অন্যগুলোকে তাড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। এটি দেখে মনে হয় যেন শেয়ালটি মালিকের আদেশ পালন করছে। তবে শেয়ালটি অন্যান্য পশুপাখিকে কামড়ানো কিংবা কোনো ধরনের অত্যাচার করে না।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন আনোয়ার পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা জানি শেয়াল হচ্ছে মাংসাশী প্রাণী। যেসব প্রাণীর জলাতঙ্ক বা রেবিস (জুনোটিক রোগ) হয় বা জীবাণু বহন করে তাদের মধ্যে শেয়াল অন্যতম। সেক্ষেত্রে শিয়াল ও তার পালনকারী দুজনকেই জলাতঙ্ক টিকা নেওয়া উচিত।
মো. জিয়াউর রহমান/এমজেইউ