রাস্তা ছাড়াই নদীর মাঝে দাঁড়িয়ে সেতু, ৯ বছর ধরে ভোগান্তি
নদীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে সেতু তবে সেতুতে ওঠার জন্য নেই কোনো সড়ক। দুই পাশে বাঁশের সাঁকো দিয়ে উঠতে হয় সেতুতে। এভাবে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ। এক দুই বছর নয়, ৯ বছর ধরে চলছে তাদের এই দুর্ভোগ।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের কালী নদীর উপর অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত সেতুটি চরম জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে জনগণের স্বার্থে সেতু নির্মাণ করা হলেও নেই সংযোগ সড়ক। অন্যদিকে নদীর তুলনায় সেতু ছোট হওয়ায় বর্ষায় পানির চাপে সংযোগ সড়ক ভেসে যায়। বাঁশের সাঁকো দিয়ে সেতুতে উঠতে হয়। ৯ বছরেও এই দুর্ভোগের সমাধান হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জোয়ারদারপাড়া, শালঘর মধুয়া, কাচারীপাড়া, দুধকুমড়া, খালপাড়া বাজারসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বাঁশের সাঁকো দিয়ে সেতুতে উঠে চলাচল করছেন। অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ করায় সরকারের লাখ লাখ টাকা অপচয় হচ্ছে। সেতুটি জনদুর্ভোগের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। দ্রুত সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে পণ্য পরিবহন ও মানুষের যাতায়াতের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সেতু-কালভার্ট কর্মসূচির আওতায় ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৩২ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে নির্মিত হওয়া সেতুটির দুই পাশে এখনো কোনো রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। সেতুর দুইপাশের সংযোগ সড়ক ছাড়াই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়। ফলে সেতুটি ওই অঞ্চলের মানুষের চলাচলের কোনো কাজেই আসছে না।
স্থানীয়রা জানান, নির্মাণের কয়েকমাস পরে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় চেয়ারম্যান বালু দিয়ে জরাজীর্ণ সংযোগ সড়কের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু নির্মাণের পরের বছরই বন্যায় সেতুটির সংযোগ সড়ক ভেসে গেলেও ৯ বছরে আর সংস্কার করা হয়নি।
সারাবছর পায়ে হেঁটে কোনোরকম সেতুটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কৃষিপণ্য পরিবহন, ব্যবসায়ীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে না সেতুটি। আর বর্ষার সময় কোনো কাজেই আসে না সেতুটি। অথচ উপজেলার এই গ্রামগুলাতে প্রচুর ধান, পাট, পেঁয়াজসহ হরেক রকমের শাকসবজি কৃষকরা চাষ করলেও যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, নদীর মাঝে সেতু করা হয়েছে। দুই পাড়ে রাস্তা নেই। পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য বাঁশের চরাট ব্যবহার করি। ৯ বছরেও এই ভোগান্তির সমাধান হয়নি। রাস্তা না থাকায় আমাদের খুব কষ্ট হয়। ১০ মিনিটের পথ ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ঘুরে যেতে হয়। অনেক সময় মাথায় ফসল নিয়ে পারাপার হওয়ার সময় নদীতে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। আমরা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।
স্থানীয় আমিন হোসেন বলেন, সংযোগ সড়ক বাদেই নদীর মাঝখানে অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ৯ বছর ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। জনকল্যাণের সেতুটিই এখন চরম জনদুর্ভোগের কারণ। আমরা সমাধান চাই।
স্কুল শিক্ষার্থী হিমেল বলেন, নদীর মাঝখানে সেতুটি অনেক বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু দুইপাশে রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে চরম ভোগান্তি হয়। দীর্ঘদিন এভাবে রাস্তাবিহীন পড়ে আছে, তবুও কর্তৃপক্ষের কোনো নজরে আসে না। বর্ষা মৌসুমে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে কলেজে যেতে হয়। যতদ্রুত সম্ভব সেতুটির সড়ক নির্মাণ করা হলে সবারই উপকার হয়।
এ বিষয়ে বাগুলাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৯ বছর আগে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর দুইপাশে রাস্তা নেই। বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়। মাটি দিয়ে রাস্তা করা হয়েছিল একবার। নদীর অনুপাতে ব্রিজটি ছোট হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানির চাপে সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। সড়ক না থাকায় এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। তবে সড়ক নির্মাণের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
কুমারখালীর ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাইদুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সেতু-কালভার্ট কর্মসূচির আওতায় ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৩২ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে নির্মিত হওয়া সেতুটির দুই পাশে এখনো রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। সড়কের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়কটি মেরামত করা হবে।
রাজু আহমেদ/আরকে