হেফাজতের নায়েবে আমিরের পদত্যাগের ঘোষণা
হরতালে নাশকতা নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুল আউয়াল। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের আমির ও শহরের ডিআইটি মসজিদের খতিব। প্রবীণ এ আলেমের হেফাজত ছাড়ার ঘোষণা নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়।
বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে এ পদত্যাগের বিষয়টিকে বিশাল ফাটল বলে মনে করছেন অনেকেই। যদিও এ সিদ্ধান্তে ‘নাখোশ’ মহানগর হেফাজতের নেতারা দাবি করেছেন, আব্দুল আওয়াল সংগঠন বুঝেন না। তিনি নেতৃত্ব দিতে বা গুছিয়ে কাজ করতে পারেন না।
জানা গেছে, গত রোববারে হেফাজতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে মহাসড়কের কাঁচপুর পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হেফাজতসহ হরতালের সমর্থনকারীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭টি যানবাহনে আগুন, অর্ধশত যান-বাহন ভাঙচুর করে।
এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও বেশ চড়াও ছিল হেফাজতের কর্মীরা। ভাঙচুর করা হয় গণমাধ্যমের গাড়ি, মারধর করাসহ লাঞ্ছিত করা হয় বহু সাংবাদিককে। কিন্তু একেবারেই উল্টো চিত্র ছিল নারায়ণগঞ্জ শহরে। নগরীর ডিআইটি মসজিদ, যেটি হেফাজতের নেতাকর্মীদের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, সেই ডিআইটি মসজিদে জেলা ও মহানগর হেফাজতের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকলেও ভাঙচুর বা পিকেটিং কোনোটিই হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই দিন ভোর থেকেই ডিআইটি মসজিদের বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাজোয়া যানসহ বেশ কঠোর ও সতর্ক অবস্থান বিরাজ করছিল। কয়েকশ হেফাজত নেতাকর্মী সেখানে জড়ো হলেও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধে মাঠে নামনেনি নেতারা। বিশেষ করে ওই মসজিদের খতিব ও জেলা হেফাজতের আমির মাওলানা আবদুল আওয়াল সেখানে পুলিশকে অনুরোধ করেও নামতে না পারায় নিজেদের নিবৃত রাখার পরামর্শ দেন।
বিষয়টি নিয়েই মূলত মহানগর হেফাজতের নেতারা নাখোশ হন আবদুল আওয়ালের ওপর। হেফাজতের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মাওলানা আব্দুল আওয়ালের পিছু হটে যাওয়াই কাল হয়েছে। এ কারণে সোমবার কেন্দ্রীয় হেফাজতের দেয়া কর্মসূচি ডিআইটি মসজিদে হওয়ার কথা থাকলেও সেটি আবদুল আওয়ালকে না জানিয়ে ফতুল্লার দেওভোগ মাদরাসা মসজিদে স্থানান্তর করা হয়। মূলত এ বিষয়টি জানতে পেরেই সোমবার দিবাগত রাতে মসজিদে বয়ানকালে নিজের ইস্তফার কথা জানিয়ে দেন আবদুল আওয়াল।
পদত্যাগের সিদ্ধান্ত কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল আওয়াল জানান, রোববার সকাল থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশ মসজিদের বাইরে ও চারপাশে অবস্থান নিয়েছিল। আমরা শত অনুরোধ আবদার করেও বের হতে পারিনি। এরই মধ্যে খবর পাচ্ছিলাম যে, সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডে সন্ত্রাসীরা বাস পোড়াচ্ছে। সেখানে মাদ্রাসার ছাত্ররা ছিল না। এখন আমরা বা আমি যদি সেখানে বের হতাম তবে সিদ্ধিরগঞ্জের মতো এখানেও গুলি চালানো হতো। অনেক মায়ের বুক খালি হতো। সাধারণ মানুষের রক্ত-ঘামের টাকায় গড়ে উঠা এ মসজিদ ঝাঁঝরা হয়ে যেত। কিন্তু আমাদের অতি উৎসাহি লোকজন এটা বুঝলনা। তারা অভিযোগ করেছে কেন আমি পুলিশ বেরিকেড না মেনে বের হলাম না। আর পুলিশ বলছে যদি বের হতেন তবে এই ১৭ বাস পোড়ানোর মামলায় আপনি হতেন ১ নম্বর আসামি। যদি সেদিন আমি বের হতাম আর লাশ পরত তবে আপনারাই আমাকে দোষ দিতেন। তাই আমার দলের লোকজন ইতোমধ্যে আমাকে মাইনাস করে দিয়েছে। তারা দোয়ার স্থান পরিবর্তন করে ফেলেছে। তাই যেহেতু আমার বয়স হয়েছে, আমি দাঙ্গা হাঙ্গামা পছন্দ করি না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার আর আমীর থাকার দরকার নাই। অতি উৎসাহিরা দল পরিচালনা করুক।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান জানিয়েছেন, পদত্যাগের বিষয়টি আবদুল আওয়ালের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হলেও বিষয়টি সংগঠনের নিয়ম মোতাবেক হয়নি। কারণ উনি হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাও। মসজিদে ওপেন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত না দিয়ে উনি দলীয় ফোরামে বিষয়টি বলতে পারতেন। তাছাড়া রোববারের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি উনি কি করে সকাল ১০টার মধ্যে বলে দিলেন শেষ হয়ে গেছে, যা আমাদের অবাক করেছে। এ নিয়ে কর্মীরা উনার ওপর ক্ষুব্ধ।
তিনি আরও বলেন, দোয়ার বিষয়টিও কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ ছিল যা মহানগর দেওভোগ মাদরাসায় করেছে সোমবার বিকেলে। উনি জেলা সভাপতি হয়ে জেলার পক্ষে তো দোয়ার আয়োজন করতে পারেননি। এদিকে নাশকতার ব্যাপারে এই হেফাজত নেতা দাবি করেন, আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল, কিন্তু অনুপ্রবেশকারীরা এসব ঘটিয়েছে।
রাজু আহমেদ/এমএএস