বাবা-মা জানতেন না বাকপ্রতিবন্ধী হতে চলেছে শিশু আয়ান
শিশু আবরার মাহতাব আয়ানকে নিয়ে তার চাচি এসেছেন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে। আয়ানের জ্বর ও ঠান্ডার সমস্যা খুলে বলছেন চিকিৎসককে। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আয়ানকে নিরীক্ষা করছিলেন। নিরীক্ষার সময় আয়ানকে স্বাভাবিক রাখতে একটি চকলেট উপহার দেওয়া হয়। আয়ান চকলেটটি মুখে দিতে গেলে চিকিৎসক খেয়াল করেন সে বাকপ্রতিবন্ধী হতে চলেছে। তিনি বিস্মিত হয়ে তার চাচিকে জিজ্ঞাসা করলেন আয়ান কথা বলতে পারে কিনা?
আয়ানের চাচি চিকিৎসককে বলেন- ফিডার খাওয়ার কারণে মিহি করে তোতলিয়ে কথা বলতে পারে আয়ান। বড় হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। চিকিৎসক তার পাশে থাকা আয়ানের বাবাকে বললেন- আপনার ছেলে আর একটু বড় হলেই বাকপ্রতিবন্ধী হয়ে যাবে। মুহূর্তে আয়ানের বাবার মুখ অন্ধকার হয়ে এলে চিকিৎসক বললেন- ছোট্ট একটি অপারেশন করালে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে আয়ান।
ঘটনাটি শনিবার (২৪ জুন) শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার কাঁচিকাটা ইউনিয়নের কাঁচিকাটা মডেল হাই স্কুল মাঠে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর দিনব্যাপী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে ঘটেছে।
এ ঘটনার পর পুরো ক্যাম্প ও কাঁচিকাটা জুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসক আয়ানের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়ার পর হাসি ফুটেছে সবার মুখে।
শিশু আবরার মাহতাব আয়ানের বয়স চার বছর। তার ছোট ভাই তাহসান আহমেদের বয়স চার মাস হওয়ায় তাকে নিয়ে ক্যাম্পে এসেছেন তার চাচি তহুরা বেগম। আয়ানের বাবা পলাশ হাওলাদার কাঁচিকাটা বাজারের খাবার হোটেল ব্যবসায়ী। তার মা সুলতানা বেগম গৃহিণী।
আয়ানের পরিবার সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল হওয়ায় এলাকার মানুষ ছোটখাটো রোগকে তুচ্ছ হিসেবেই বিবেচনা করে। আয়ানের তোতলিয়ে কথা বলার বিষয়টিও তুচ্ছ হিসেবে দেখছিলেন তারা। তাদের কল্পনাতেও ছিল না যে আয়ান বাকপ্রতিবন্ধী হিসেবে বেড়ে উঠছে। অথচ মুখে কথা ফোটার পর থেকেই তোতলিয়ে কথা বলছিল আয়ান।
আয়ানের বাবা পলাশ হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা জানতাম না যে আয়ানের মুখে সমস্যা, বড় হলে সে বাকপ্রতিবন্ধী হবে। চিকিৎসক জানিয়েছেন- দাঁতের কাছাকাছি জিহ্বার একটি রগের কারণে সে তোতলিয়ে কথা বলছে। শিশু বাচ্চা নিয়ে ভয়াল পদ্মা পাড়ি দেওয়া দুঃসাহসিক কাজ। ছোট খাটো অসুস্থতার সমস্যা হলেও ভয়ে কখনো আয়ানকে নিয়ে বড় ডাক্তারের কাছে যাইনি। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে আয়ানের জ্বর ও ঠান্ডার চিকিৎসা নিতে আসার পর বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। আমার ছেলের জীবনের কত বড় উপকার যে হলো তা বলার ভাষা আমার জানা নেই। যারা এই ক্যাম্পের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী হাসপাতাল গাজীপুরের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ও আয়ানের চিকিৎসক ডা. আবজালুল বাশার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আয়ানের জন্মগত একটি সমস্যা ছিল, যাকে মেডিকেলের ভাষায় ডাঙটাই বলে। যা তার বাবা মা জানতো না। এ কারণে আয়ানের বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আয়ানের পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছি চিকিৎসা করাতে। আয়ানকে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। সেখানে চিকিৎসা নিলে আয়ান সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।
কাঁচিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আনসার বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। তারা ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প নিয়ে না এলে আমার এলাকার শিশু আয়ান হয়তো বাকপ্রতিবন্ধী থেকে যেত।
আয়ানের চিকিৎসার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন শরীয়তপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এম এ কাইউম পাইক।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা কমান্ড্যান্ট মো. মইনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের পদ্মা বেষ্টিত কাঁচিকাটা চরের মেডিকেল ক্যাম্পে সকল বয়সী মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ নিচ্ছেন। মজার বিষয় হলো আয়ান নামে একটি বাচ্চা পেয়েছি। আয়ানের বাবা-মা জানতো না যে তাদের সন্তান বাকপ্রতিবন্ধী হতে চলেছে। তারা হয়তো ভেবেছে এখন ঠিকভাবে কথা বলতে না পাড়লেও বড় হলে ঠিকভাবে কথা বলতে পারবে। তার জিহ্বার একটি রগের সমস্যার কারণে সে তোতলিয়ে কথা বলে। আয়ানের সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছে আনসার ও ভিডিপির মেডিকেল ক্যাম্প। এটা আমাদের সার্থকতা।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে ১৮৫ জন শিশুসহ ৩১৩ জন নারী ও ১৩০ জন পুরুষ চিকিৎসা সেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ পেয়েছেন।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাহমিনা আক্তারের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এম এ কাইউম পাইক। প্রধান অতিথি ছিলেন শরীয়তপুর জেলা কমান্ড্যান্ট মো. মইনুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট মামুন হাওলাদার, ডা. আবজালুল বাশার, কাঁচিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট আব্দুল মান্নান মিয়া, কাঁচিকাটা মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, কাঁচিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের প্রমুখ।
আরএআর