ভাসমান কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার, দেখতে ভিড়
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার যমুনেশ্বরী নদীর বরাতি সেতু। সেতুর দুই দিকে শত শত মানুষ সারি। সবার চোখ নদীর জলের দিকে। কারণ উজানের ঢলের সঙ্গে ভেসে আসা জলের ওপর জমাট বাঁধা কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে লোকজন নদী পার হচ্ছেন। কচুরিপানার ওপর শিশু কিশোরেরা ফুটবল খেলছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বাড়ছে উৎসুক লোকজনের ভিড়।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুর ১টার দিকে বরাতি সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের যমুনেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত পরিত্যক্ত বরাতি সেতুতে মানুষের ভিড়। ভিড় ঠেলে নদীতে তাকাতেই দেখা যায় লোকজন কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেটে নদী পার হচ্ছে। শিশু-কিশোররা খেলছে ফুটবল। অনেকে মাঝ নদীতে কচুরিপানার ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, ভিডিও করেছেন, কেউ কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করছেন। সেতু ও সড়কের ওপর লোকজনের পাশাপাশি রিকশা-ভ্যান-মোটরবাইকেরও সারি দেখা যায়।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন দিন আগে উজানের ঢলে ভেসে আসা কচুরিপানা বরাতি সেতুর উত্তর পাশের ২০০ মিটার অংশে নদীর দুই তীরে জমাট বাঁধে। পানির স্রোত নিচ দিয়ে বহমান থাকলেও কচুরিপানাগুলো আর নদীর ওই অংশ থেকে না সরায় গতকাল বুধবার স্থানীয় কিছু শিশু-কিশোর সেখানে ফুটবল খেলে এবং কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হয়। এ ঘটনা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন তা দেখতে ছুটে আসে। হাজারো মানুষের ভিড় দেখে অনেক পথচারীও সেখানে দাঁড়িয়ে জমাট বাঁধা কচুরিপানার ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন।
ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য তাজ উদ্দিন বলেন, কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেটে নদী পার হচ্ছে এমন ঘটনা শুনে আমি নিজেও এখানে এসেছি। নদীর প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় কচুরিপানা জমাট বাঁধায় লোকজন তার ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পারাপার হচ্ছে, ছেলেরা ফুটবল খেলছে। তা দেখতে শত শত মানুষ নদীর তীরে ও সেতুর ওপরে ভিড় করছে। কিছু লোককে কচুরিপানার বাঁধা জমাট ভেঙে দেওয়ার জন্য লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা কাজ করছেন।
ডাঙ্গীরহাট এলাকা থেকে কচুরিপানার ওপর দিয়ে নদী পার হওয়া দেখতে আসা সোনা মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা ফেসবুকে বিষয়টি দেখে তিনটি ভ্যানে ৩০ জন এসেছি। এটা বিরল ঘটনা। এর আগে আমরা ভাসমান কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হতে দেখিনি। তাই আজ দেখতে আসলাম। এখানে প্রচুর মানুষের ভিড়।
চরকডাঙ্গা গ্রামের বাবলু মিয়া বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারাগঞ্জ যাওয়ার সময় দেখি হাজারো মানুষের জটলা। তাই রিকশা থামিয়ে এগিয়ে এলাম। নদীর ওপর ভাসমান কচুরিপানার ওপর মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে।
রংপুর থেকে দিনাজপুরগামী মোটরসাইকেল আরোহী দম্পত্তি লুৎফর রহমান ও আয়েশা খাতুন লোকজনের ভিড় দেখে বরাতি এলাকায় থামেন। আয়েশা খাতুন বলেন, এখানে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ নদীর দিকে তাকাচ্ছে। কৌতূহলবশত আমরাও মোটরসাইকেল থামিয়ে এখানে আসি। দেখছি কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে মানুষ নদীর এপার থেকে ওপারে যাচ্ছে।
তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, বিষয়টি জানার পর সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে লোকজন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। নদীর ওই এলাকায় কচুরিপানা অপসারণে কাজ চলছে। যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য পুলিশ পাহারা দিচ্ছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর