‘নবাব’ ও ‘ড্যানি’র পেছনে প্রতিদিন খরচ ১৫০০ টাকা
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সারাদেশে আলোচনায় আসছে বিশাল আকার, দাম ও বাহারি নামের গরু। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হলো ২৭ মণ ওজনের ‘ড্যানি’ ও ১৮ মণ ওজনের ‘নবাব’ নামে দুটি গরু। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া গ্রামের উদ্যোক্তা হাসিব মৃধা তার নিজ খামারে এবারের ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন বিশাল আকারের গরু দুটিকে।
গরু দুটি বিক্রির জন্য লোভনীয় অফার না থাকলেও রয়েছে সাশ্রয়ী মূল্য। ২৭ মণ ওজনের ড্যানির দাম হাঁকানো হচ্ছে ৭ লাখ ও শাহিওয়াল জাতের ১৮ মণ ওজনের নবাবের দাম হাঁকানো হচ্ছে ৫ লাখ টাকা। এদিকে গরু দুটিকে দেখতে খামারে প্রতিদিন ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।
জানা গেছে, তিন বছর আগে কাশিয়ানি উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামের উদ্যোক্তা হাসিব মৃধার খামার হাজেরা এগ্রো ফার্মে জন্ম নেয় ফ্রিজিয়ান ও শাহিওয়াল জাতের ষাড় দুটি। জন্মের পর থেকে পরম যত্নে পালন করে আসছে ষাঁড়ের মালিক খামারি হাসিব মৃধা ও তার খামারের কর্মচারীরা। প্রতিটি ষাঁড়ই বিশাল দেহের অধিকারী। কোনো প্রকার ওষুধ ছাড়া দেশীয় খাবার খাইয়ে এবারের ঈদের জন্য প্রস্তুত করেছেন খামারি হাসিব।
গরু দুটির খাবারের তালিকায় রয়েছে খড়, ঘাস, ভুট্টা, ভুসি, কুড়া, ছোলা ও খৈলসহ মিশ্রিত দানাদার খাবার। কোনো মোটাতাজাকরণ খাবার ছাড়াই অর্গানিকভাবে হয়েছে পেশিবহুল শরীর। প্রতিদিন আট কেজি দানাদার খাবার, ঘাস ও খড় খায় ষাড় দুটি। প্রতিদিন ষাঁড় দুটির প্রত্যেকটির খাবারের পেছনে ব্যয় হয় ৭৫০ টাকা।
প্রায় ৯ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট উচ্চতার এক টন ওজনের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘ড্যানি’। আর ৮ ফুট লম্বা ও সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতার শাহিওয়াল জাতের কালো রঙের ষাড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘নবাব’। এদিকে গরু দুটিকে দেখতে প্রতিদিনই খামারে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা পাশাপাশি আসছেন ক্রেতারাও।
গরু দুটির মালিক উদ্যোক্তা হাসিব মৃধা বলেন, গরু দুটি কে অনেক যত্নে বড় করেছি কোরবানিতে বিক্রির জন্য । প্রতিদিন গরু দুটিকে নিয়ম করে খাবারসহ গোসল করাই। গরুর দুটির পেছনে প্রতিদিন আমার আটশো টাকা খরচ হয়। ড্যানি নামের ষাড়টির বর্তমান ওজন এক টনের বেশি আর নবাবের ওজন আছে ১৮ মণ। আমি ড্যানির দাম চাচ্ছি ৭ লাখ ও নবাবের দাম চাচ্ছি ৫ লাখ টাকা। যদি কেউ কিনতে চায় তাহলে তার দাম বলার সুযোগ রয়েছে। গরু দুটি কে আমি সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে বড় করেছি। যারা গরু দুটি কে কিনবে তারা অবশ্যই লাভবান হবেন।
পাশের গ্রাম থেকে গরু দেখতে আসা সুমন বলেন, হাসিব ভাইয়ের গরু দুটি দেখতে এসেছি। গরু দুটি দেখতে অনেক বড়। আমার ধারণা এই উপজেলায় এটাই সবচেয়ে বড় গরু। গরু দুটি দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছে।
গরু দুটি কে ছোট থেকে পালন করা খামারের কর্মচারী শিহাব বলেন, ছোটবেলা থেকে গরু দুটিকে পালন করে আসছি। অনেক যত্ন নেই গরু দুটির। কোরবানিতে বিক্রি হয়ে গেলে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগবে আমার। ওদের পালন করতে গিয়ে গরু দুটির প্রতি একটা মায়া হয়ে গেছে। তারপরও কি করার ওদের বড় করা হয়েছে বিক্রির জন্য। কিন্তু যারা গরু দুটি কিনবে তারা অবশ্যই লাভবান হবেন। কারণ তাদের ছোট বেলা থেকেই দেশীয় পদ্ধতিতে খাবার খাইয়ে বড় করা হয়েছে।
কাশিয়ানী উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পৃথ্বীজ কুমার দাশ বলেন, গরু দুটি ছোটবেলা থেকেই আমাদের তত্বাবধানে রয়েছে। আমরা সবসময় গরু দুটির খোঁজ নিয়েছি। এ বছর কোরবানিতে গরু দুটি কে বিক্রির জন্য হাটে তোলা হবে। আশাকরি গরু দুটি কে নায্য দামে কিনে নিবেন ক্রেতারা।
তিনি আরও বলেন, গরু দুটিকে ছোটবেলা থেকেই কাঁচা খাবার খাইয়ে বড় করা হয়েছে। গরুকে কাঁচা খাবার খাওয়ানো হলে সেই গরুর তেল ও চর্বি কম হয় পাশাপাশি মাংস অনেক সুস্বাদু হয়। যে কারণে গরু দুটি যারা কিনবেন তারা লাভবান হবেন বলে আমি মনে করি।
আশিক জামান/আরকে