নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে হেফাজতের সংঘর্ষ
হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকা পর্যন্ত তাণ্ডব চালিয়েছেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। রোববার (২৮ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় হেফাজতের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ-বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় শফিকুল ইসলাম ও শাহাদাত নামের দুজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ দুজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে হরতাল সমর্থনকারীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অসংখ্য যানবাহনে ভাঙচুর চালান এবং দুটি বাসসহ পাঁচটি যানবাহন অগ্নিসংযোগ করেন। তারা ভোর থেকেই রাস্তায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোরতা ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের দফায় দফায় হরতালবিরোধী মিছিল সমাবেশের কারণে নারায়ণগঞ্জ শহরে কোনো পিকেটিং করতে পারেননি হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জে শিমরাইল, সাইনবোর্ড, সানারপাড়সহ বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা একত্র হয়ে হরতালের সমর্থনে মিছিল করে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকায় অবস্থান নেন।
এ সময় তারা মহাসড়কে বেশ কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন এবং রাস্তায় ইট বিছিয়ে সড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে দফায় দফায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।
পুলিশ জানায়, পরে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল কিছুটা শুরু হলে হেফাজতের নেতাকর্মী ও মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা পুনরায় রাস্তায় নামেন। পুলিশ ও বিজিবি তাদের বাধা দিলে হেফাজত নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। পুলিশ শর্টগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
হেফাজতকর্মীরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকা থেকে শিমরাইল পর্যন্ত বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর এলাকায় দুটি ট্রাক, একটি মাইক্রো, একটি বাসে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন এবং সাইনবোর্ড এলাকায় একটি বাসে আগুন দেন।
অন্যদিকে শহরের ডিআইটি এলাকায় সকাল থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা রেলওয়ে ডিআইটি মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেন। ভোর থেকেই ডিআইটি মসজিদ পুলিশ, বিজিবি ঘিরে রাখে। সকাল সাতটার দিকে পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যেই হেফাজতের নেতাকর্মীরা মসজিদের বারান্দা ও আঙিনায় হরতালের পক্ষে স্লোগান দেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মসজিদে ঢুকে হেফাজতের জেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে কথা বলেন। মসজিদের ভেতরে কিছু নেতাকর্মী অবস্থান নেন এবং বাকিরা চলে যান।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগ ও জেলা মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় শহরে হরতালবিরোধী সমাবেশ ও মিছিল করেছেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শহরে হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পিকেটিং থেকে নিবৃত করা হয়েছে। মহাসড়কে সকালে থেকে তারা রাস্তায় আগুন ধরিয়েছিল। পরে পুলিশ গিয়ে যান চলাচল ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। তবে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাননি বলে জানান পুলিশ সুপার।
রাজু আহমেদ/এনএ