তিস্তার পানি কমে বিপৎসীমার নিচে, বাড়ছে ভাঙন
গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও এখন কমতে শুরু করেছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমতে শুরু করায় নদী পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
সোমবার (১৯ জুন) বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় ওই পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত শুক্রবার রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। রোববার রাতে পানি বিপৎসীমার দশমিক ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ সকালে পানি বিপৎসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সকাল ৯টার দিকে পানি দশমিক ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার দশমিক ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর দুপুর থেকে পানি আরও কমতে শুরু করেছে। রাতের দিকে আরও পানি কমে যেতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডালিয়ায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫০ মিলিমিটার।
অপরদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দোমহনী বন্যা পূর্বাভাস ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ভারতের গজলডোবা ও মেখলিগঞ্জ (বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত) তিস্তা ব্যারাজে বেশ কিছু জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। ভারত তাদের এলাকার মেখলিগঞ্জ পয়েন্টে গত তিন দিন ধরে হলুদ সংকেত জারি রেখেছে। বর্তমানে মেখলিগঞ্জে তিস্তার পানি ৬৫.৫০ সেন্টিমিটার (৬৫.৯৫ বিপৎসীমা) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েক দিন ধরে তিস্তার পানি বাড়া-কমার মধ্যেই রয়েছে। আজ সকালে তিস্তার পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে এখন কমতে শুরু করেছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা এবং লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ, হাতীবান্ধা, আদিতমারী এলাকার নদীর চরাঞ্চলের নিচু এলাকার অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখির খাবার নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা। এছাড়াও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকটি চরের বাসিন্দারা। বন্যার আশঙ্কায় তিস্তাপাড়ের ফসল আগাম ঘরে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়শিংহেশ্বর চল এলাকার দুলাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ উজানের পানি আসতে থাকে। ফলে নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। শনিবার পানি কমলেও রোববার রাত থেকে পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পায়। তবে এখন কমতে শুরু করেছে।
টেপাখড়িবাড়ি চরখড়িবাড়ি গ্রামের গ্রামের আজিজার মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কমতে শুরু করেছে। এতে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর নদীর পেটে আমাদের ফসলি জমি যাচ্ছে। এবারও চলে যাবে হয়তো। এ নিয়ে চিন্তায় আছি।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউনিয়নের চল ঝাড়সিংহেশ্বর চরসহ বেশ কিছু এলাকায় পানি প্রবেশে করেছে। ওসব এলাকায় সবসময় খোঁজ-খবর রাখছি। নিম্নাঞ্চলে বসবাসরতদের উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে মাইকিং করা হয়েছে।
খালিশা চাঁপানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষজন বন্যার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এখনো বন্যা দেখা না দিলেও কয়েক জায়গায় নদী ভাঙনের খবর পেয়েছি।
শরিফুল ইসলাম/আরএআর