একমাত্র মেয়ের চিকিৎসার জন্য নিঃস্ব বাবা-মায়ের আকুতি
বাবা-মায়ের আদরের ধন পাঁচ বছরের ফুটফুটে মেয়ে জুথি। যার চাঁদ মুখ দেখে হতদরিদ্র বাবা-মা সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে যেত। সেই মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এখন অসহায় বাবা-মা চোখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছেন। অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার করানোর সামর্থ্য নেই তাদের। কোথায় পাবে সে এত টাকা? যে বয়সে পড়াশোনা, খেলাধুলা ও দুষ্টুমিতে মেতে থাকার কথা, সে বয়সে শিশু জুথি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কঠিন জীবন পার করছে। সন্তানের এমন অসুস্থতার কারণে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকেন জুথির বাবা-মা।
মাদারীপুর পৌরশহরের ২নং শকুনির বাসিন্দা শাহিন হাওলাদার ও লাইলি বেগম দম্পতির একমাত্র মেয়ে জুথি। জন্মগতভাবেই জুথি শারীরিক প্রতিবন্ধী। বাবা-মা জানতে পারে জুথির জন্মের কয়েকদিন পরে। তখন থেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা করাচ্ছেন তারা। টাকার অভাবে করাতে পারেননি উন্নত চিকিৎসা। এরই মধ্যে বিক্রি করেছেন নিজেদের মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকুও। এখন থাকেন অন্যের বাড়িতে।
জুথির মা লাইলি বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার তিন বাচ্চার মধ্যে প্রথম বাচ্চা পানিতে পরে মারা যায়। পরে দ্বিতীয় বাচ্চা জন্মের ছয়দিন পরে মারা গেছে। সর্বশেষ আশা মেয়ে জুথিকে নিয়ে। জুথি জন্মের তিন মাস পরে দেখি তার দুটি পায়ে কিছু সমস্যা আছে। পরে তাকে ফরিদপুর শিশু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করলে ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা ধানমন্ডি সেন্টাল হাসপাতালে পাঠায়। সেই জায়গায় চিকিৎসা করে একটু সুস্থ হলে বাড়িতে নিয়ে আসি। কয়েকদিন পরে হঠাৎ আবার অসুস্থ হয়ে পরলে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। সেখান থেকে ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে পাঠায়।
সেখানকার ডাক্তাররা বলেছেন, জুথির পায়ের রগ ছোট হওয়ায় পঙ্গুতে পরিণত হয়েছে। তাকে সুস্থ করতে উন্নত চিকিৎসার দরকার। এজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমাদেরতো এতো টাকা নেই। আমরা কিভাবে আমাদের মেয়েকে চিকিৎসা করাব। যা ছিল সব কিছুই চিকিৎসার জন্য ব্যয় করেছি। আমাদের আর কিছুই নেই। এখন আমরা নিঃস্ব! একজনের থেকে ১ লাখ টাকা ঋণের ওপর আনছিলাম। এরপর ঘরবাড়ি বিক্রি করে কয়দিন চিকিৎসা করাইছিলাম। আমাদের সম্বল বলতে আর কিছুই নেই। আমাদের দুনিয়ার একমাত্র সম্বল হলো আমাদের মেয়েটি। আপনারা আমার মেয়েটিকে সাহায্য করে একটু বাঁচান। আল্লাহ রহমতে আপনাদের সাহায্য পেলে আমার মেয়েকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারবো। তাহলে আমার মা সুস্থ হয়ে হাঁটতে পারবে। সরকার ও বিত্তবানদের কাছে দাবি জানাচ্ছি আপনারা আমাকে সাহায্য করেন।
জুথির বাবা শাহিন হাওলাদার বলেন, আমি টেইলারিং কাজ করে আমার অসুস্থ বাবা-মাসহ সংসার চালাতে এখন হিমশিম খেতে হয়। তার ওপর দীর্ঘদিন ধরে মেয়ে জুথি অসুস্থ। আমি আমার নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধারদেনা করে এতদিন মেয়ের চিকিৎসা চালিয়ে আসছি। তার পক্ষে আর মেয়ের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমি বাধ্য হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার এবং সমাজের দানশীল, দয়াবান, ধনবান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট ছোট্ট সোনামণির জীবন বাঁচাতে অর্থ সাহায্যের আকুল আবেদন জানাই।
জুথির দাদী ফরিদা বেগম বলেন, আমাদের এখন আর কিছু নাই। আমাদের যা কিছু আছে সবকিছু আমরা আমার নাতনি চিকিৎসার জন্য ব্যয় করছি। আমার নাতনিকে সাহায্য করলে সে হাঁটতে পারবে।
লামিয়া নামের এক প্রতিবেশী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জন্মের পর থেকেই মেয়েটার পায়ে সমস্যা। মেয়েটিকে চিকিৎসা করাতে ওর বাবা-মা ভিটামাটি বিক্রি করেছেন। ডাক্তার বলছে উন্নত চিকিৎসা করাইতে। উন্নত চিকিৎসা করাইলে মেয়েটি সুস্থ হবে। এখন তাদের যে অবস্থা কিভাবে তারা এই মেয়েকে ঢাকা নিয়ে চিকিৎসা করাবে। সরকার এবং বিত্তবানদের কাছে আবেদন তাদেরকে একটু সাহায্য করার জন্য।
মাদারীপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শাহিন হাওলাদারের মেয়ে জুথি শারীরিক প্রতিবন্ধী তাকে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করিয়েছেন তার বাবা-মা। মেয়ের চিকিৎসা করতে করতে এখন তারা নিঃস্ব। আমাদের পৌরসভার থেকে তাকে সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া এই অসহায় পরিবারের পাশে সবাইকে এগিয়ে আশার আহ্বান জানাচ্ছি।
মাদারীপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ফেরদাউসি আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবেদন করলে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী তাকে সহযোগিতা করা হবে।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জুথির পরিবার আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা মাধ্যমে তাকে সাহায্য করা যেতে পারে।
রাকিব হাসান/আরকে