কাশ্মিরের আঙ্গুর এখন বরিশালের লাভলীর বাগানে
শখের বসে আঙ্গুর চাষ করছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের দোয়ারিকা গ্রামের লাভলী বেগম। তার আঙ্গুর বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন মানুষ। লাভলীর যদিও এই ফল চাষের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না তবে ইউটিউব দেখে চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। বাড়ির পরিত্যক্ত জমিতে শুরু করেন চাষ। প্রথম আবাদেই সন্তোষজনক ফলন পেয়েছেন লাভলী। তাই এই মৌসুমে বাগানের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
রোববার (১৮ জুন) দুপুরে লাভলীর আঙ্গুর বাগানে আলাপচারিতায় এসব কথাই বলছিলেন। তিনি সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুস সালামের স্ত্রী।
তিনি জানান, পরিবারের কাজ শেষে অবসর কাজে লাগাতেই একটা নতুন কিছু করার চিন্তা করি। ঝিনাইদহের এক আঙ্গুর চাষির ইউটিউবের ভ্লগ দেখে ভালো লাগায় তার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে প্রতি পিস ৫০০ টাকা দামে ৪৬টি আঙ্গুর ফল গাছের কলম নিয়ে আসি। আমার বাগানের আঙ্গুরগুলো কাশ্মিরের ছমছম প্রজাতির আঙ্গুর।
শুরুটা করি ২০২২ সালের মার্চ মাসের দিকে। বাড়ির সামনের ঈদগাহ সংলগ্ন ১২ শতাংশ পরিত্যক্ত জমিতে ঝিনাইদহের ওই চাষির সঙ্গে আলাপ করে প্রস্তুত করি। মাটি প্রস্তুতের প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে ২০/২২ দিন ডাম্পিং করে রেখে দিয়ে কলম লাগাতে হয়। প্রথমবার চাষে সন্তোষজনক ফলন আসায় এই মৌসুমে আরও ১২ শতাংশ জমিতে খেত প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
কলম লাগানোর ৭ মাস পরে প্রথমে কয়েক থোকা আঙ্গুর হয়। তখন ভয়ে ছিলাম টক নাকি মিষ্টি হয় সেই নিয়ে। সবগুলো গাছেই পর্যাপ্ত আঙ্গুর ধরেছে। ইতোমধ্যে ১৪ কেজির মত বিক্রিও করেছি।
লাভলী বেগম বলেন, কাশ্মিরের মাটির সঙ্গে বরিশালের মাটির অনেক পার্থক্য। তবে আঙ্গুর চাষ করে আমার মনে হয়েছে, সব মাটিতেই এই ফল সুস্বাদু হয়।
তিনি জানান, প্রথম চাষে আঙ্গুর গাছের জন্য মাচা তৈরি করতে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাঁশ দিয়েও মাচা তৈরি করা যায়। তাতে খরচ কম হবে। এছাড়া তিনি ২০ হাজার টাকার কলম এনেছেন। এখনো গাছে যে পরিমাণের আঙ্গুর আছে তাতে আরও ১৪ থেকে ১৫ কেজি হবে।
এই চাষি বলেন, আঙ্গুরের একটি গাছ ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে বলে জেনেছি। আমি সেই অনুসারে জিআই পাইপ দিয়ে মজবুত মাচা তৈরি করে নিয়েছি। এখন আঙ্গুরের পাশাপাশি ৩০০ টাকা করে এই গাছের কলমও বিক্রি করি। প্রতিদিনই অনেক লোক বাগান দেখতে আসে।
অনেকে আঙ্গুর ও গাছের কলম কিনে নেন বলে জানান লাভলী বেগমের দেবর আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ভাবী প্রথমে চিন্তা করেন আঙ্গুর চাষের। তার চিন্তার সঙ্গে একমত হয়ে আমরা পরিবারের সকলেই তাকে সহায়তা করেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রহমান বলেন, কৃষক লাভলী বেগম নিজ উদ্যোগে পরিত্যক্ত জমিতে আঙ্গুর চাষ করেছেন। তাকে বিভিন্ন সময়ে আমরা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছি। তাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যান্য কৃষকরা যারা আঙ্গুর চাষ করবেন তাদেরও আমরা একইভাবে সহায়তা করব। এভাবে ফল চাষ সম্প্রসারণ হবে। আমি আশা করছি এভাবে ফল চাষ বাড়াতে পারলে আঙ্গুরের আমদানি করার প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে