সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে : জোনায়েদ সাকি
এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, এই সরকার, যারা মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, যারা আমাদের সবাইকে নাগরিক হিসেবে আজকে খারিজ করে দিয়েছে তাদেরকে উৎখাত করার জন্য এবং দেশের মানুষের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে লড়াই চলছে- এই লড়াইয়ের যৌথ ঘোষণায় পাটকল চালুর দাবি জ্বল জ্বল করে আছে। আগামী দিনের সরকার বাধ্যতামূলকভাবে পাটকলগুলো চালু করতে বাধ্য থাকবে। আজকে কোনো লড়াই একটা থেকে আরেকটা বিচ্ছিন্ন নয়, সমস্ত লড়াইকে একসূত্রে গঠিত করে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে।
শনিবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় খুলনা প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে জাতীয় পাট কনভেনশনে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। বন্ধ সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালু ও আন্দোলনের নীতি-কৌশল প্রণয়নের লক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ।
বিজ্ঞাপন
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়ার জন্য ক্ষমতার ভারসাম্য আর জবাবদিহিতা আর অন্যদিকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার কাঠামো এই দুই দাবি আদায় করে আমাদের দেশে আর কেউ যাতে জমিদারি করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তার মধ্য দিয়েই সমস্ত শ্রমিকের অধিকার, মজুরি, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, বাঁচার অধিকার, কর্মসংস্থানের অধিকার কর্মরক্ষার অধিকার, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আগামী দিনের সেই লড়াইয়ে আপনাদের ডাক দিয়ে যাই, লড়াই চলছে, সর্বত্র আরও শক্তিশালী লড়াই গড়ে তুলুন। ডাক আসলেই রাজপথের দখল নিন। আগামীর বাংলাদেশ জনগণের নিয়ন্ত্রণে জনগণের কর্তৃত্বে চলবে সেই রাজনীতি বিকশিত করুন।
তিনি বলেন, এই যে মিলগুলো আধুনিকায়ন, নবায়ন করা দরকার। এই সিদ্ধান্ত কার নেওয়ার কথা? মন্ত্রণালয়, সরকার, বিজিএমসির। এটাতো শ্রমিকের নেওয়ার কথা নয়। নতুন নতুন পণ্য তৈরি, আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি করা দরকার, ২০১০ সালে এই সরকারই আইন করেছে ‘প্যাকেজিং অ্যাক্ট’। এগুলো বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকার, বিজেএমসির, শ্রমিকের তো কোনো দ্বায় নেই। কিন্তু বন্ধ করার সময় শ্রমিকের পেটে লাথি মারা হয়েছে, তারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন। বিজেএমসির কেউ চাকরিচ্যুত হননি। বসে বসে বেতন, বোনাস সুবিধা, গাড়ি-বাড়ি সব কিছুই তারা নিয়ে যাচ্ছেন। এই পাটকলগুলো মূলত লাভ করছিল। লাভটাকে লোকসানে পরিণত করেছে এই বিজেএমসি, মন্ত্রণালয়, সরকারের লোকেরা। আর লোকসানের অজুহাত তুলে এখন বন্ধ করেছেন। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এবার আর চুরি নয়, একেবারে ডাকাতি করে লুটপাট করে নেবেন ওই কারখানার জমি, সমস্ত সম্পত্তি।
বিজ্ঞাপন
এই পাটকলগুলো লাভে পরিণত করা যায় দাবি করে জোনায়েদ সাকি বলেন, পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করা যায়। পাটকলগুলো ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নবায়ন করা সম্ভব। পাটকলের জন্য ১২০০ কোটি টাকা হয় না, আর এক একটি প্রকল্পে আকাশচুম্বি লুটপাট হয়। যেখানে এক টাকা খরচ হওয়া দরকার সেখানে তারা ১০ টাকা, এখনতো তারা ১০০ টাকা খরচ করেন। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে তারা বিদেশে পাঠিয়েছে। আর পাটকল রক্ষার জন্য টাকা হয় না। টাকা হবে, নবায়ন হবে। জনগণের মালিকানা রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে এই পাটকলগুলো লাভজনক করা সম্ভব। এই পাটকলগুলো আমাদের লাভজনক করা দরকার, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পাট বিরাট সম্ভাবনাময় খাত। দেশে-বিদেশে পরিবেশের কারণে পাট আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।
তিনি আরও বলেন, আজকে চিনিকল বন্ধ করে দিচ্ছেন, চিনিকে আমদানির ওপর নির্ভর করছেন। দাম কোথায় গিয়ে ঠেকছে তার পুরো দায়ভার আজকে সাধারণ মানুষের ওপরে। পাট কিন্তু আগামী দিনের নিত্য ব্যবহার্য জিনিস। এইটার উপরে আমাদের উৎপাদন, বিপণনে রাষ্ট্রায়ত্ত খাত থাকতে হবে।
নাগরিক পরিষদের সচিব এস এ রশীদের সঞ্চালনায় কনভেনশনে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সিপিবি নেত্রী সুতপা বেদজ্ঞ। কনভেনশনে অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ।
এছাড়া খুলনা জেলা সিপিবির সভাপতি ডা. মনোজ দাশ, জেলা বাসদের আহ্বায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, মোজাম্মেল হক খান ছাড়াও বন্ধ ২৬টি পাটকলের আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা বক্তব্য দেন।
মোহাম্মদ মিলন/আরএআর