সেই ১৭ জনের জানাজা হলো একই মাঠে
রাজশাহীর কাটাখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুনে পুড়ে নিহত ১৭ জনের জানাজা একই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৭ মার্চ) রাত ১১টার দিকে পীরগঞ্জ উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠে প্রথমে আটজনের ও পৌনে ১২টার দিকে বাকি নয়জনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত স্বজনদের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করে কাটাখালী থানা পুলিশ। সেখান থেকে পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাসে ও অ্যাম্বুলেন্সে করে
মরদেহগুলো পীরগঞ্জে আনা হয়।
দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১০জনই রামনাথপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। বাকি ৭ জনের তিনজন পীরগঞ্জ পৌরসভার প্রজাপাড়ার, একজন থানাপাড়ার, দুইজন রায়পুর ইউনিয়নের দ্বাড়িকাপাড়ার এবং আরেকজন মিঠিপুর ইউনিয়নের দূরামিঠিপুর দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা।
রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় মজিদপুরে একই পরিবারের পাঁচজনকে ও বড় রাজারামপুরে আরেকটি পরিবারের চারজনকে একসঙ্গে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এছাড়া নিহত অন্যদের পারিবারিক ও স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে শহীদ মিনার মাঠ থেকে জানাজা শেষে নিহতদের মরদেহ নিজ নিজ গ্রামে নেওয়া হলে সেখানে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ।
নিহতরা হলেন- রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় মজিদপুর গ্রামের পার্টস ব্যবসায়ী ফুল মিয়া (৪০), তার স্ত্রী নাজমা (৩৫), মেয়ে সাবিয়া (৪), মেয়ে সুমাইয়া (৮), ছেলে ফয়সাল (১৩),একই ইউনিয়নের বড় রাজারামপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সালাহউদ্দিন (৩৬), তার স্ত্রী সামছুন্নাহার (২৮), ছেলে সাজিদ (৭), মেয়ে সাফা (৪), সামছুন্নাহারের বড় বোন কামরুন্নাহার (৪১), রায়পুর ইউনিয়নের দ্বাড়িকাপাড়া গ্রামের মোখলেছার (৪৫), তার স্ত্রী পারভীন (৩৫), মিঠিপুর ইউনিয়নের দূরামিঠিপুর দক্ষিণপাড়ার শহিদুল মিয়া (৪৫), পীরগঞ্জ পৌরসভার প্রজাপাড়ার তাজুল করিম ভুট্টু (৪৫), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (৩৫), ছেলে ইয়াসিন (১৪) এবং থানাপাড়ার মাইক্রোবাস চালক হানিফ হোসেন পচা (২৮)।
জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে মাইক্রোবাসযোগে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুরে রাজশাহীর কাটাখালী সড়কের কাছে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লেগে যায়। এতে মাইক্রোবাসে থাকা ১৮ জনের মধ্যে চালক হানিফ হোসেনসহ ১৭ জন আগুনে পুড়ে মারা যান। এ দুর্ঘটনায় বেঁচে যান পাভেল নামে এক তরুণ। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার বাবা-মা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। তাদের বাড়ি রায়পুর ইউনিয়নের দ্বাড়িকাপাড়া গ্রামে।
বড় মজিদপুর গ্রামের নিহত ফুল মিয়ার ছোটভাই সুজন মণ্ডল ও মামা আব্দুস ছালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফুটফুটে দুটি মেয়ে আর একটা ছেলেসহ স্বামী-স্ত্রী সবাই আগুনে পুড়ে মারা গেছে। ওই বাচ্চাগুলোর ছবি চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে। এমন মৃত্যু আমরা কোনো দিনও কল্পনা করিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, পীরগঞ্জে একসঙ্গে এতোগুলো মানুষের মৃত্যু এর আগে কখনও হয়নি। ১৭ জনের সবাই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। এ রকম মৃত্যু যেন আর কারও না হয়। এই শোক সহ্য করা খুব কষ্টের।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসকেডি