ব্যবসায়ী সিদ্দিককে তাহলে কারা তুলে নিয়ে গেল!
তিন দিন ধরে নিখোঁজ রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের নয়নদিয়া গ্রামের মো. ছিদ্দিক মিজি ওরফে সোহেল (৪৮)।তাকে মঙ্গলবার (৬ মে) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বাগমারা কালার দোয়ালের ব্রিজের সামনে থেকে 'ডিবি পুলিশ' পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের।
নিখোঁজ ছিদ্দিক মিজি সোহেল সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নয়নদিয়া গ্রামের মো. হাশেম মিজির ছেলে।ছিদ্দিক মিজি পেশায় ব্যবসায়ী। গতকাল বুধবার (৭ মে) তার খোঁজে বাবা হাশেম মিজি রাজবাড়ী সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
জিডি সূত্রে জানা গেছে, ছিদ্দিক মিজি সোহেল গত মঙ্গলবার (৬ মে) রাত সাড়ে ৭টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে ব্যবসায়ের পাওনা টাকা কালেকশন করতে রাজবাড়ী ফল বাজারের উদ্দেশ্যে বের হয়।পাওনা টাকা কালেকশন করে বাড়ি ফেরার পথে রাত ১১টার দিকে ছিদ্দিক তার বন্ধু সাঈদকে কল দিয়ে বলে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বাগমারা কালার দোয়ালের ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কে বা কাহারা তুলে নিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনদিন ধরে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।
ছিদ্দিক মিজির বাবা হাসেম মিজি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে আমার ছেলে বাড়ি থেকে বের হয় টাকা কালেকশন করতে। রাত ১১টার দিকে সে তার বন্ধু সাঈদকে ফোন দিয়ে কই তারে বাগমারা এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ ধরছে।এরপর থেকে আমার ছেলের ফোন বন্ধ। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পরে আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে সদর থানায় নিখোঁজ জিডি করি। আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই।
ছিদ্দিক মিজির মা আয়েশা বেগম বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা নেই। তার নামে কোনো মামলাও নেই। আমার ছেলে হালাল পথে ব্যবসা করে সংসার চালায়। সে তার ব্যবসার টাকা কালেকশন করতে গিয়ে আর বাড়িতে ফিরে আসে নাই। তার কাছে কালেকশনের তিন লাখ টাকা ছিল। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তারে তুলে নিয়ে গেছে। আমার ছেলের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমি আমার ছেলেরে ফেরত চাই।
ছিদ্দিক মিজির বন্ধু সাঈদ বলেন, রাত ১১টার দিকে ছিদ্দিক তার মোবাইল নম্বর থেকে আমাকে কল দিয়ে বলে কয়েকজন তাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটক করেছে। এই কথা বলেই ছিদ্দিকের ফোন কেটে যায়। পরে তার নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে আমি বিষয়টি ছিদ্দিকের পরিবারকে জানাই এবং তাৎক্ষণিকভাবে তারা বাগমারা এলাকায় গিয়ে খোঁজাখুঁজি করি। পরবর্তীতে তাকে সেখানে না পেলে আমরা থানায় গিয়ে খোঁজ করি। এবং ডিবি অফিসে গিয়ে খোঁজ করলে তারা জানায় যে ছিদ্দিক নামের কাউকে তারা আটক করেনি। পরবর্তীতে আমরা থানায় নিখোঁজ জিডি করি।
মিজানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. টুকু মিজি বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ছিদ্দিক মিজি খুবই ভালো লোক। আমি নিয়মিত ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
এ বিষয়ে ডিবির ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। কিন্তু আমরা ছিদ্দিক মিজি নামের কাউকে আটক করিনি।এমনকি মঙ্গলবার রাতে আমরা বাগমারা এলাকায় কোনো অভিযানে যাইনি।
রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা একটি নিখোঁজ জিডি পেয়েছি।জিডিটি সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি থানায় আমরা ম্যাসেজ করে দিয়েছি। এছাড়াও জিডির সূত্র ধরে আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি।
মীর সামসুজ্জামান/এমএএস