রাজাবাবু বিক্রি হলেই গরুর খামার করবেন ইতি
প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগ মুহূর্তে নানা আকৃতি ও দামে আলোচনায় আসে বাহারি নামের গরু। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে কুষ্টিয়ার ‘রাজাবাবু’। কালো রঙের ২২ মণ ওজনের ষাঁড়টির দাম ৮ লাখ টাকা চাচ্ছেন মালিক।
ঈদে বিক্রির জন্য বেশ আদর-যত্নে রাজাবাবুকে প্রস্তুত করেছেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মোকাররমপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের খামারি শারমিন আক্তার ইতি। ইতির রাজাবাবুকে দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ভিড় করছেন।
ইতি ওই গ্রামের দুবাই প্রবাসী শাহাবুল ইসলাম সেন্টুর স্ত্রী।
খামারি শারমিন আক্তার ইতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফ্রিজিয়ান শাহীওয়াল ক্রস জাতের ষাঁড়টি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আমার ভাশুরের কাছে থেকে ৭৫ হাজার টাকায় কিনি। আদর করে তার নাম রাখি রাজাবাবু। পাঁচ ফুট উচ্চতার ষাঁড়টি লম্বায় সাত ফুট। ২২ মণ ওজনের ষাঁড়টিকে শুরু থেকেই ঘাস ও দানাদার খাবার খাওয়াচ্ছি। রাজাবাবু বেশির ভাগ সময় ঘাস খায়। আমি নিজেই ঘাস চাষ করি। তাছাড়া গম, ছোলা ও ভুট্টার ভুসিসহ প্রতিদিন ৬০০ টাকার দানাদার খাবার লাগে তার। রাজাবাবু খুবই শান্ত প্রকৃতির। সন্তানের মতো লালনপালন করে এবার কোরবানিতে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছি। দাম চাচ্ছি ৮ লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, রাজাবাবুর আকর্ষণীয় নাম আর আকারে বড় হওয়ায় ষাঁড়টিকে দেখতে প্রতিদিন উৎসুক মানুষ আমার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। ষাঁড়টির খাবারের পেছনে প্রতিদিন যে টাকা খরচ হয়েছে, তাতে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারলে কিছুটা লাভ হবে। এরই মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী ষাঁড়টি কেনার জন্য যোগাযোগ করেছেন। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম বলেননি কেউ।
ইতি বলেন, রাজাবাবু সকালে ঘাস খায়। দুপুরে ভুট্টার গুঁড়া, আটা, ধানের গুঁড়া, খৈল, গমের গুঁড়া, ছোলার গুঁড়া, গুড় ও পানি খেতে দিই। বিকেলে ও রাতে ঘাস, শোয়ার আগে পানি খেতে দিই। প্রতিদিন সকাল ও বিকেল দুইবার গোসল করাই। বাড়ির পাশে লিবিয়া ঘাস চাষ করি। মাঝেমধ্যে আমার ৮ বছর বয়সী ছেলে ও আমার ভাশুর আমাকে হেল্প করে। আমি গরু পালনের পাশাপাশি মাঠে সবজির চাষ করি।
এক প্রশ্নের জবাবে ইতি বলেন, ২০২১ সালের প্রথম দিকে ৬-৭ মাস বয়সী বাছুরটিকে ৭৫ হাজার টাকায় কিনি। শখের বশে গরু পালন শুরু করেছি। তবে এখন আমার একটা খামার দেওয়ার স্বপ্ন আছে। রাজাবাবুকে অনেক ভালোবাসি। তাকে বিক্রি করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে, তবুও বিক্রি করতেই হবে। রাজাবাবুকে বিক্রি করে একটা খামার দেব।
খামারি ইতির মা আম্বিয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মেয়ে কয়েক বছর আগে এই বাছুরটি কিনেছিল। প্রথম থেকেই নিজের সন্তানের মতো আদর-যত্ন করে রাজাবাবুকে লালনপালন করছে। গরুটা অনেক বড় হয়েছে। এটি বিক্রি করে একটা খামার দিতে চাই ইতি।
ইতির প্রতিবেশীরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতি খুবই পরিশ্রমী নারী। তার স্বামী বিদেশে থাকেন। বাড়িতে তার ৮ বছর ও ১১ মাস বয়সী দুই ছেলে রয়েছে। সে সংসারের কাজকর্মের পাশাপাশি গরু পালন, মাঠে ঘাস ও সবজির চাষাবাদ করে। গরুটি অনেক বড় হয়েছে। রাজাবাবুকে দেখার জন্য অনেকেই ভিড় করছেন।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিদ্দীকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জেলায় ৭১ হাজার গরু, এক লাখ ছাগলসহ এক লাখ ৭৮ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। বিভিন্ন খামারে বড় বড় গরু আছে। খামারিদের সঙ্গে আমরা সব সময় যোগাযোগ রাখছি এবং সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি।
রাজু আহমেদ/এমজেইউ